গাজায় প্রতি তিনজনে একজন না খেয়ে দিন পার করছেন: জাতিসংঘ

গাজার একটি ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের জন্য ফিলিস্তিনিদের ভিড়ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রতি তিনজনের একজন না খেয়ে দিন পার করছেন।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘(গাজায়) পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।’

গাজায় অনাহার নিয়ে সতর্কতা এ সপ্তাহে আরও তীব্র হয়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার অপুষ্টিতে গাজায় আরও নয়জন মারা গেছেন। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে উপত্যকাটিতে মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ১২২।

অবরুদ্ধ গাজায় সব রকম পণ্য সরবরাহের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। দেশটি দাবি করছে, গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশে এখন কোনো বাধা নেই। সেখানে সব অপুষ্টিজনিত সমস্যার জন্য হামাসকে দায়ী করছে তারা।

একজন ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা গতকাল বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। যদিও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা এটিকে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য অকার্যকর উপায় বলে সতর্ক করেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান নতুন করে বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জর্ডানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কাছ থেকে এখনো তাঁদের সেনাবাহিনী এ–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনুমতি পায়নি।

গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশের ওপর থেকে অবিলম্বে বিধিনিষেধ তুলে নিতে গতকাল ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এ তিন দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে গাজায় চলমান ‘মানবিক বিপর্যয় ও যুদ্ধ’ বন্ধের আহ্বানও জানায়। দেশগুলো বলেছে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা উচিত।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা ব্যাখ্যা করার মতো না। কোনো করুণা নেই, সত্য নেই, নেই কোনো মানবতা।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ওই সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন জাতিসংঘের বিকল্প হিসেবে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে ইসরায়েল–হামাস নতুন চুক্তির সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতার থেকে তাদের আলোচনার জন্য পাঠানো দল প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হামাস ‘আসলে কোনো চুক্তি করতে চায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, তারা মরতে চায়।’

তবে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসির গাজা প্রতিনিধি‍কে বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা তাঁদের জানিয়েছেন, আলোচনা এখনো ভেস্তে যায়নি। আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের দোহায় ফেরার কথা রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় তাণ্ডব শুরু করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন