গাজায় হামাসবিরোধী অধিকারকর্মীকে মুখোশধারীদের মারধর
আমিন আবেদ একজন ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী। গাজা উপত্যকায় শাসক হামাসের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার তিনি। গত সোমবার বিকেলে বাড়ির পাশ থেকে মুখোশধারী ব্যক্তিরা তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর মারধর করা হয় আমিনকে। এখন এই অধিকারকর্মী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়ে আলোচিত হন ৩৫ বছর বয়সী আমিন। সোমবার পাঁচজন সশস্ত্র মুখোশধারী তাঁকে বাড়ির পাশ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।
চিকিৎসাধীন আমিন বিবিসিকে বলেন, ‘৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর অধিকার আমার আছে। এটা বন্ধ করব না আমি।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। ওই দিনই গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা এখনো চলছে।
৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ। এ তথ্য জানিয়েছে হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও ব্যাপক প্রাণহানির কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় গাজাবাসীর মধ্যে হামাসের প্রতি ক্ষোভ ক্রমে বাড়তে শুরু করেছে।
আমিন জানান, পাঁচজন মুখোশধারী ব্যক্তি বন্দুক ও বড় আকারের ধারালো ছুরি নিয়ে এসেছিল। পরে তাঁকে একটি আধা বিধ্বস্ত বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মারধর করা হয়।
আমিন বলেন, মারধর করার সময় মুখোশধারী ব্যক্তিরা তাঁকে ‘ইসরায়েলের চর’ ও ‘বেইমান’ বলে গালিগালাজ করছিল।
মুখোশধারীদের দলনেতা আমিনের হাতের আঙুল ভেঙে দিতে বলেন, যাতে তিনি আর কখনোই ৭ অক্টোবরের হামলার কারণে হামাসের সমালোচনা করে কোনো নিবন্ধ লিখতে না পারেন।
ওই সময় পথচারীদের কয়েকজন এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে মুখোশধারী ব্যক্তিরা ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তখন নিজেদের হামাসের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন তাঁরা। মুখোশধারী ব্যক্তিরা আমিনকে সেখানেই ফেলে রেখে চলে যান। এরপর পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
৭ অক্টোবরের হামলার আগে থেকেই আমিন হামাসবিরোধী অধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত। গাজায় হামাসের শাসনের সমালোচনা করায় তাঁকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার সকালে হামাসের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছিলেন আমিন। ওই পোস্টে হামাসের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের জনগণের মধ্যে ‘বিভাজন তৈরি’ করা এবং ফিলিস্তিনিদের পৃথক রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি।
যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আমিন লেখেন, ‘বিশ্ব, আমরা ক্লান্ত। আমরা আসলেই ক্লান্ত।’
আমিনকে মারধরের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে বিবিসির পক্ষ থেকে হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।