কাতারে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় ‘খুবই অসন্তুষ্ট’ ট্রাম্প
ইসরায়েল গতকাল মঙ্গলবার কাতারে বিমান হামলা চালিয়ে হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতাদের হত্যাচেষ্টার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক পদক্ষেপ আরও জোরালো করেছে। যুক্তরাষ্ট্র একে একতরফা হামলা আখ্যায়িত করে বলেছে, এ ধরনের হামলা চালিয়ে মার্কিন ও ইসরায়েলের স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলের এ হামলার ‘প্রতিটি দিক নিয়েই আমি খুবই অসন্তুষ্ট।’ এ বিষয়ে আজ বুধবার পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটনের একটি রেস্তোরাঁয় কাতার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের এ হামলা নিয়ে আমি আনন্দিত নই। এটা ভালো পরিস্থিতি নয়। তবে আমি এটুকু বলব—আমরা জিম্মিদের ফেরত চাই; কিন্তু আজ যেভাবে ঘটনাটা ঘটেছে, তাতে আমরা মোটেও খুশি নই।’
মঙ্গলবারের ওই হামলাকে ইসরায়েল ন্যায্য বলে দাবি করলেও কাতার একে বিশ্বাসঘাতকতা ও ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি বলেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনার জন্য কাতার যে চেষ্টা চালাচ্ছিল, তা এ বিমান হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেস্তে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগী দেশ কাতার। সেখানে অবস্থিত আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার ও মিসর। তবে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখন ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
ট্রাম্প বলেন, হামাসকে হামলার নিশানা করাকে যৌক্তিক মনে করেন তিনি। তবে উপসাগরীয় দেশ কাতারে হামলা হওয়ায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত। ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতার ন্যাটোর সদস্য নয়। তবে কাতারেই অনেক বছর ধরে হামাসের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা অবস্থান করছেন।
সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এ হামলার কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা এবং প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগী দেশ কাতার। সেখানে অবস্থিত আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার ও মিসর। তবে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখন ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি তাঁর দূত স্টিভ উইটকফকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন কাতারকে হামলার আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়। তবে কাতার বলছে, হামলার আগে তাদের সতর্কবার্তা দেওয়ার খবর মিথ্যা। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ফোন দিয়েছেন ঠিকই, তবে ততক্ষণে দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
হামাস বলেছে, হামলায় সংগঠনটির গাজা অঞ্চলের প্রধান (নির্বাসিত) এবং শীর্ষ আলোচনাকারী খলিল আল-হায়ার ছেলেসহ তাঁদের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। হামাস বলেছে, ইসরায়েল তাদের যুদ্ধবিরতিবিষয়ক আলোচনাকারী দলের সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করেছিল। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প লিখেছেন, হামলার ঠিক আগে মার্কিন সেনারা তাঁর প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। তবে এ সতর্কবার্তা ইসরায়েলের কাছ থেকেই এসেছে কি না, তা তিনি বলেননি।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘সার্বভৌম রাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ কাতার শান্তিপ্রতিষ্ঠার চেষ্টায় মধ্যস্থতার জন্য অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম এবং ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। দেশটির অভ্যন্তরে একতরফাভাবে বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।’
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সুহাইল আল-হিন্দি আল জাজিরা টিভিকে বলেন, ইসরায়েলের হামলায় তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব অক্ষত আছে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি তাঁর দূত স্টিভ উইটকফকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন কাতারকে হামলার আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়। তবে কাতার বলছে, হামলার আগে তাদের সতর্কবার্তা দেওয়ার খবর মিথ্যা। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ফোন দিয়েছেন ঠিকই, তবে ততক্ষণে দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী আল-থানি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাতার এ হামলার ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রাখে এবং তারা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।’
হামলায় কাতারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
হামলার পর কাতারের আমিরকে ফোন করে এ ধরনের ঘটনা ওই দেশে আর ঘটবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও কথা বলেছেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, খলিল আল-হায়াসহ হামাসের শীর্ষ নেতারা এই হামলার লক্ষ্য ছিলেন। এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন, ইসরায়েল এখনো হামলার তথ্য সংগ্রহ করছে ও হামলায় কোনো হামাস নেতা বা কর্মকর্তা মারা গেছেন কি না, তা এখনো ঠিক জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েল হামলার ঠিক আগে মার্কিন সেনাদের জানিয়েছিল। কিন্তু ওয়াশিংটনের সঙ্গে আগে থেকে এ ব্যাপারে কোনো সমন্বয় করা হয়নি বা ওয়াশিংটন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
গত মে মাসে কাতার সফর করেছেন ট্রাম্প। ওই সময় তিনি যে হোটেলে ছিলেন সেটির অবস্থান গতকালের হামলাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে।
সোমবার জেরুজালেমের উপকণ্ঠে একটি বাস স্টপেজে হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেড দায় স্বীকার করে।
নেতানিয়াহু কাতারে চালানো হামলাকে সম্পূর্ণ ন্যায্য বলে দাবি করেছেন।