সিরিয়ার সুয়েইদা ঘিরে জড়ো হচ্ছেন বেদুইন যোদ্ধারা, তীব্র লড়াই
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সত্ত্বেও সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সুয়েইদায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে বেদুইন গোষ্ঠীর তীব্র লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিরিয়া সরকারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সীমিত সংখ্যায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুয়েইদায় প্রবেশ করতে দিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। দেশটির একজন কর্মকর্তা আজ শুক্রবার এ কথা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলি ওই কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ায় চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সুয়েইদা জেলায় পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীকে সীমিত আকারে প্রবেশ করতে দিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।
তবে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, নতুন করে সুয়েইদা প্রদেশে মোতায়েনের জন্য সরকারি বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে না।
দ্রুজ একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে শিয়া মুসলিমদের একটি শাখা। লেবানন ও ইসরায়েলেও প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীর অনুসারী রয়েছে। সম্প্রতি দ্রুজদের সঙ্গে বেদুইন গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষ থামাতে গত সোমবার সুয়েইদা প্রদেশে হস্তক্ষেপ করে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। কিছুদিন ধরে দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও অপহরণ ঘিরে এই সংঘাতের সূচনা হয়েছিল।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সুয়েইদায় প্রবেশ করলে তাদের ওপর হামলা চালান সশস্ত্র দ্রুজ সদস্যরা। দ্রুজদের সমর্থনে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর বিমান ও ড্রোন হামলা শুরু করে ইসরায়েল। একপর্যায়ে বুধবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত দেশটির সামরিক সদর দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি স্থানে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়।
দামেস্কের বর্তমান সরকারকে ‘জিহাদি’ আখ্যা দিয়ে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সরকার। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এই অঞ্চলকে ‘বাফার জোন’ হিসেবে রাখতে চায় ইসরায়েল। যদিও সিরীয় বাহিনীর ওপর হামলার কারণ হিসেবে সংখ্যালঘু দ্রুজদের ‘সুরক্ষার’ কথা বলছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও আরব দেশগুলোর মধ্যস্থতায় দ্রুজদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে সুয়েইদা থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয় সিরিয়া সরকার। সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বেদুইনদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠে দ্রুজ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে। এরপর আরব বেদুইন উপজাতি নেতারা দ্রুজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিলে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শেষ দিকে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
আরব বেদুইন উপজাতি নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ শুক্রবার সকালের দিকে অন্যান্য বেদুইন গোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক যোদ্ধা সুয়েইদার আশপাশে জড়ো হন। তাঁরা শহরের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে তীব্র লড়াই ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সংঘর্ষ বন্ধে স্থানীয় নেতারা সিরিয়ার সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সোমবার থেকে চলা সংঘর্ষের প্রথম চার দিনে অন্তত ৩৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, নারী ও শিশু রয়েছে।
এখন পর্যন্ত সুয়েইদায় নতুন করে সরকারি বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্বীকার করলেও সংঘাত থামানো নিয়ে পর্দার আড়ালে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলে সরকারি বাহিনী মোতায়েন হতে পারে।
সিরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক লাবিব আল-নাহহাস আল-জাজিরাকে বলেন, দ্রুজদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর আরও বেদুইন গোষ্ঠী এ লড়াইয়ে যোগ দিতে শুরু করে। ফলে নতুন করে সহিংসতা ঠেকাতে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সরকারি বাহিনীকে সুয়েইদায় প্রবেশ করতে দিতে সম্মত হয় ইসরায়েল।
লাবিব আল-নাহহাস বলেন, দামেস্ক এবং দক্ষিণ সিরিয়ার অন্যান্য এলাকায় ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলার পর সুয়েইদার নিয়ন্ত্রণ নেয় দ্রুজদের প্রধান আধ্যাত্মিক নেতা শেখ হিকমাত আল-হাজারির মিলিশিয়া বাহিনী। কিন্তু বেদুইন গোষ্ঠী ও তাদের পরিবারের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বড় ভুল করেছে তারা।
এদিকে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ইসরায়েল সিরিয়াকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিরীয় প্রেসিডেন্ট।