ইরানে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু কী, কারা জড়িত, নিহত কারা
ইসরায়েল আজ শুক্রবার জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এই হুমকি দূর করতে তারা সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইরানের একাধিক স্থানে হামলা হয়েছে। বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে রাজধানী তেহরানসহ দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে।
হামলা নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হলো—
লক্ষ্যবস্তু কী ছিল
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের বিভিন্ন এলাকায় পারমাণবিক স্থাপনাসহ ডজনখানেক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে রাজধানী তেহরানে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, শহরের পূর্বাঞ্চলে ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের মধ্যাঞ্চলের ইস্পাহান প্রদেশের নাতানজ শহরে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে।
নাতানজ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র একাধিকবার আঘাতের শিকার হয়েছে বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়েছে। টেলিভিশনে এ স্থাপনা থেকে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে থাকার দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলায় তেহরানে আবাসিক ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
একজন ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় সম্ভবত ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি ও দেশটির শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইরানি গণমাধ্যম বলছে, হামলায় রেভল্যুশনারি গার্ডসের প্রধান হোসেন সালামি নিহত হয়েছেন।
এখন কেন হামলা
ইরানকে হুমকি হিসেবে দেখে ইসরায়েল। গত বছরও তারা ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ আজকের হামলাকে ‘আগাম প্রতিরোধমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ ও ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করে আসছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে এ অভিযোগ ইরান সব সময় অস্বীকার করে আসছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত বুধবার অভিযোগ করে, ইরান পারমাণবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বৈশ্বিক বাধ্যবাধকতা মানছে না।
আইএইএর এই অভিযোগের পর ইসরায়েল আবার ইরানের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
ইরানে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল, এমন ইঙ্গিত ছিল। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলেছিল, ইরানে ইসরায়েলের হামলা আসন্ন। তবে এ হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় করবে না ইসরায়েল।
ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, হামলা অত্যন্ত নিকটবর্তী, এ কথা তিনি বলতে চান না। তবে এমন কিছু খুব সম্ভবত ঘটতে পারে বলে তাঁর মনে হচ্ছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার ষষ্ঠ দফার আলোচনা আগামী রোববার ওমানে হওয়ার কথা। এর মধ্যে ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল।
কারা জড়িত
ইসরায়েল সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তার জন্য ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করে। তবে আজকের হামলা ইসরায়েল এককভাবে চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক মার্কো রুবিও।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। তাঁদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো, অঞ্চলটিতে আমেরিকান বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে যেকোনো হামলার বিষয়ে তেহরানকে সতর্ক করেছেন মার্কো রুবিও।
মার্কো রুবিও বলেছেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, তারা বিশ্বাস করে, এই অভিযান তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তবে হামলার সমালোচনাও করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিক্রিয়া কী
তেহরানের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রতিবেশী ইরাক পুরোপুরি তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েল সতর্ক করে বলেছে, ইরান যেকোনো সময় পাল্টা হামলা চালাতে পারে। তাই ইসরায়েল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ইসরায়েল তার আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প তাঁর নিরাপত্তাপ্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট এ হামলার সমালোচনা করেছেন।
মার্কিন সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট ও সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সদস্য জ্যাক রিড বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলার উদ্বেগজনক সিদ্ধান্তটি আঞ্চলিক সহিংসতার জন্ম দিতে পারে।
ইরানে ইসরায়েলের হামলার ফলে তেলের দাম ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।