দেশে দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেন আলোচনায় জেন–জিরা

দেশে দেশে সরকারের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে তরুণরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এই ছবিটি নেপালের বিক্ষোভকারীদেরছবি: এএফপি

আরও একটি দেশে জেন-জিদের বিজয়, আরও একটি দেশে তরুণদের বিজয়...। এবার আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কার। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তরুণদের তীব্র আন্দোলনের মুখে অবশেষে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। দুই দফায় এক দশকের বেশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন তিনি।

ফ্রান্সের একটি সম্প্রচারমাধ্যম গতকাল সোমবার রাজোয়েলিনার দেশ ছাড়ার খবর জানায়। বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাদাগাস্কারে চলছিল জেন-জিদের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।

গত কয়েক বছরে এভাবে কয়েকটি দেশে জেন-জিরা অন্যায়–জুলুমের বিরুদ্ধে সাম্য–শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমে স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছেন।
অথচ এই জেন-জিদের নিয়ে একসময় কত কথাই বলা হতো—তাঁরা মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকা এক প্রজন্ম। দিন–রাত মোবাইল হাতে ঘরের কোণে পড়ে থাকেন। বাইরে খেলতে যান না, এমনকি চোখ তুলে আকাশটা পর্যন্ত দেখেন না, সবকিছুতে বিরক্ত–হতাশ, আদবকেতার বালাই নেই, তাঁদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না…।

সব ভুল প্রমাণ করে আজ বিশ্বে সাম্য প্রতিষ্ঠার নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জেন-জিরা। জেন-জি এখন এক প্রচণ্ড শক্তির নাম, যাঁরা প্রথাগত রাজনৈতিক ও সমাজব্যবস্থা ভেঙেচুরে নতুন রূপ দিচ্ছেন।

কারা এই জেনারেশন জেড বা জেন-জি

সাধারণত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়াদের জেন-জি বলা হয়। সে হিসাবে জেন-জি প্রজন্মের বয়স এখন ১৩ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। তাঁরাই প্রথম প্রজন্ম, যাঁরা ইন্টারনেটের যুগে জন্মেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন। শৈশব থেকেই তাঁরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, বাস করছেন ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়।

জেন–জিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় অরা, ব্রাহ্, ডেলুলু, পুকি, রিজ বা স্কিবিডির মতো শব্দ ব্যবহার করেন। আমাদের এসব শব্দের অর্থ বুঝতে কোনো অভিধান নয়; বরং তাঁদেরই মতো কারও কাছে যেতে হয়।

এ প্রজন্মের কিশোর–তরুণেরা বৈশ্বিক রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখে বড় হয়েছেন, মানুষে মানুষে বিভেদ আরও বাড়তে দেখেছেন, সম্পদ বণ্টনে প্রকট বৈষম্য তাঁদের অস্থির করে তুলেছে, দুর্বল চাকরির বাজার আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাঁদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে। পুরো পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করে দেওয়া এক মহামারি তাঁদের জীবনে গভীর ছাপ ফেলে গেছে।

সম্পদ বণ্টনে প্রকট বৈষম্য তাঁদের অস্থির করে তুলেছে, দুর্বল চাকরির বাজার আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাঁদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে। পুরো পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে অচল করে দেওয়া এক মহামারি তাঁদের জীবনে গভীর ছাপ ফেলে গেছে।

দুর্বলতাই যখন সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র

বাস্তব সংকটের মুখোমুখি হতে তাঁরা ভয় পান, তাঁরা থাকেন ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়—জেন-জি প্রজন্মকে নিয়ে এমন মন্তব্য হামেশাই শোনা যেত। জেন-জিরা ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় বুঁদ্ হয়ে থাকেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, টিকটক, রিলস—এসবই তাঁদের দুনিয়া।

কিন্তু প্রয়োজনে এ ভার্চ্যুয়াল দুনিয়াকে জেন–জিরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় মঞ্চ বানিয়ে ফেলেন। সম্প্রতি দেশে দেশে এর প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

যদিও যুগে যুগে সব বিপ্লবে তরুণেরাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের আরব বসন্ত—তরুণেরাই রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা পাল্টে দিয়েছেন; স্বৈরাচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। জেন-জি প্রজন্মও এর ব্যতিক্রম নয়।

তবে জেন–জিদের আন্দোলন গড়ে তোলা, নিজেদের একত্র করার ধরন বেশ ভিন্ন। যে ডিজিটাল দুনিয়াকে তাঁদের দুর্বলতা ভাবা হতো, তাঁরা সেটাকেই করে তুলেছেন তাঁদের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিবাদে জাতীয় পতাকা হাতে নেপালের পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সমবেত হয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ছবি: এএফপি

জেন-জিরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ডিসকর্ড বা টেলিগ্রামের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দিয়েছেন।

এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই তরুণেরা দ্রুত আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পারেন। ঘটনা ঘটার সময়ই সরাসরি অন্যদের সামনে তা তুলে ধরতে পারেন, মুহূর্তের মধ্যে তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারেন। এমনকি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্দোলনকে বৈশ্বিক রূপ দিতে পারেন।

একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে জেন-জিদের সব সময় বড় সংগঠন বা বিশাল সমাবেশের প্রয়োজন পড়ে না।

যেমন মরক্কোতে ডিসকর্ডে ‘জেন–জি ২১২’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তি দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের দাবিতে অনলাইনে একটি আন্দোলন শুরু করেন। মাত্র কয়েক দিনে তাঁদের সদস্যসংখ্যা ৩ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছায়।

মরক্কোর প্রধান প্রধান শহরের সড়কে নেমে তরুণেরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাঁদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, অনলাইনে শুরু হওয়া একটি প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ কত দ্রুত সড়কে বিক্ষোভের দাবানল সৃষ্টি করতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মরক্কোয় জেন-জিদের আন্দোলন।

এভাবে জেন-জিরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ও কার্যকরভাবে অন্যদের কাছে পৌঁছে যান। তাঁরা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ভাইরাল ক্যাম্পেইন তৈরি করেন, শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু শেয়ার করেন এবং এমন ভার্চ্যুয়াল ইভেন্ট আয়োজন করেন, যেখানে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করা যায়।

ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষতার মাধ্যমে জেন–জিরা ভৌগোলিক বাধা অতিক্রম করে সমমনা মানুষের কাছে পৌঁছে যান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তাঁরা এতটা জোরে আওয়াজ তুলতে পারেন, যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। জেন-জিরা ডিজিটাল দুনিয়াকে বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে সফলভাবে একীভূত করতে পেরেছেন।

রাজপথেও অকুতোভয় জেন-জি

নেপালে বিক্ষোভকারীরা ছিল মূলত তরুণ। যাদের কে জেন–জি বলা হয়। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ছবি: এএফপি

ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রভাবশালী এ প্রজন্ম সশরীর আন্দোলনেও ভয় পান না; এরই মধ্যে তাঁরা এর প্রমাণ দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ কিংবা নেপাল। আমাদের চোখের সামনে নিজেদের দাবির পক্ষে বুক চিতিয়ে লড়েছেন, দুর্নীতিবাজ আর স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে এনেছেন।

শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে জেন-জিদের আন্দোলনের মুখে দেশটিতে রাজাপক্ষে পরিবারের দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান হয়। সেখানে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি আর বৈদেশিক রিজার্ভের তলানি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এর প্রতিবাদেই তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে দুর্নীতিবাজ ও অদূরদর্শী সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেত বাধ্য করেছিলেন তরুণেরা।

এ ঘটনার ঠিক দুই বছরের মাথায় বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেছিলেন। তাঁর আমলে অনুষ্ঠিত অন্য নির্বাচনগুলোও ছিল না বিতর্কমুক্ত।

বাংলাদেশে গতবছর সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করছে। ঢাকা, বাড্ডা। ১৬ জুলাই, ২০২৪
ছবি: প্রথম আলো

ওই বছর জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন ছাত্র-জনতা। আন্দোলনকারীদের বেশির ভাগই ছিলেন জেন-জি প্রজন্মের। তরুণদের আন্দোলন দমনে কঠোর হয় হাসিনা সরকার। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাসিনার বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা তরুণেরা ব্যর্থ করে দেন। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভে অন্তত ১ হাজার ৪০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

শুধু অস্ত্র নয়, হাসিনা সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে তরুণদের আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করেছিল। তাতে ফল হয়েছে উল্টো। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পর রাজপথে আন্দোলন আরও জোরালো হয়। তীব্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।

এক বছর পর চলতি বছরের আগস্টে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেও আন্দোলনের সূত্রপাত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে।

অনলাইনে নেপালের রাজনৈতিক নেতা আর শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপনের প্রদর্শনী এশিয়ার দরিদ্র দেশটির জেন-জি প্রজন্মকে ক্ষুব্ধ করে। এদিকে দেশের সাধারণ তরুণেরা কর্মসংস্থানের অভাবে হতাশায় ডুবছিলেন। অন্যদিকে ধনীদের সন্তানেরা অনলাইনে তাঁদের সম্পদের পাহাড়ের নির্লজ্জ প্রদর্শন করে যাচ্ছিলেন। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে তাঁদের মা-বাবা ওই সম্পদের পাহাড় গড়েন।

আরও পড়ুন

নেপালে শ্রেণিবিভেদ আর সম্পদের এ অসম বণ্টনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে ‘হ্যাশট্যাগ নেপো কিডস’, ‘হ্যাশট্যাগ নেপো বেবিস’ নামে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, টিকটক, রিলস এসবই তাঁদের দুনিয়া। এমনকি কয়েক বন্ধু মিলে মুখোমুখি আড্ডা দেওয়ার সময়ও তাঁরা মুখে কথা না বলে চ্যাট করেন।  

অনলাইনের এ আন্দোলন রাজপথে নেমে আসে অন্য একটি কারণে। অপতথ্য ছড়াচ্ছে ও যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করছে না অভিযোগ তুলে নেপাল সরকার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ২৬টি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে। তরুণদের ক্ষোভের বারুদে এটি স্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করে।

৮ সেপ্টেম্বর হাজারো তরুণ রাজধানী কাঠমান্ডুসহ নেপালের বড় বড় শহরে রাস্তায় নেমে আসেন। বাংলাদেশের মতো ওই সময় নেপাল সরকারও বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতে প্রায় ৭৬ জন নিহত হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে। বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান কে পি শর্মা অলি।

আরও পড়ুন

জেন-জিদের এমন লড়াইয়ে সর্বশেষ নাম মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে গোপন চুক্তির পর একটি ফরাসি সামরিক বিমানে করে রাজোয়েলিনাকে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

মাদাগাস্কারের পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি রান্দ্রিয়ানাসোলোনিয়াইকোও প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগের খবর নিশ্চিত করেছেন।

বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাদাগাস্কারে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল। এর মধ্যেই গত রোববার বিদ্রোহী একটি সেনা ইউনিটের পক্ষ থেকে পুরো সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দেয়।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, আফ্রিকার দেশটিতে বিক্ষোভের প্রথম কয়েক দিনে অন্তত ২২ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। বিক্ষোভ দমনে সরকার ভেঙে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্টকে গোপনে দেশ ত্যাগ করতে হয়।

যেসব দেশে জেন-জিদের আন্দোলন চলছে

মাদাগাস্কারে বিক্ষোভকারীদের একটা বড় অংশই তরুণ
ছবি: এএফপি

নেপালে আন্দোলন শুরুর আগে এশিয়ার আরেক দেশ ইন্দোনেশিয়ায় জেন-জিদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের ওই আন্দোলনে ইন্দোনেশিয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধি’ বলে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতেও জেন-জিদের আন্দোলন চলছে। ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ বিক্ষোভের সূত্রপাত পেনশন আইনের সংস্কার নিয়ে। এটি পরে দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

মরক্কোতে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় আগাদির শহরে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কয়েকজন নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতায় তাঁদের মৃত্যু হয়।

হাসপাতালগুলোয় যথাযথ চিকিৎসাসেবা নেই। অথচ ২০৩০ সালের বিশ্বকাপের জন্য অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের লাখ লাখ ডলার ব্যয় জেন-জিদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচের পদত্যাগ চান।

আরও পড়ুন

ফিলিপাইনে সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কয়েক হাজার তরুণ বিক্ষোভ করেন। ভারতের লাদাখে কয়েক দিন আগে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেন-জিরা।

জেন-জি প্রজন্ম রাজনীতিতে আগ্রহী নন, দেশ নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই, তাঁরা স্বার্থপর, শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবেন—এমনটা বলার দিন আর নেই। জেন-জি প্রজন্ম নিজেরাই তাঁদের সম্পর্কে এ ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছেন।

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে লাদাখ। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ছবি: এএফপি

বরং জেন–জিরা দেখিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন, মানবাধিকার রক্ষার দাবিতে সোচ্চার, তাঁরা একটি সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা ও ন্যায়সংগত কর্মসংস্থানের সুযোগ চান।

জেন–জিরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা বৈষম্য দূর করতে চান। মানুষের দুর্ভোগ আর দুর্দশা তাঁদের কাঁদায়। এ কারণে গাজার ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সারা বিশ্বের জেন-জিরা সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন করেন।

জেন–জিরা সোচ্চার কণ্ঠের, বুদ্ধিদীপ্ত আর অকুতোভয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তাঁদের জন্য একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটই যথেষ্ট। তাঁদের হাত ধরেই হয়তো পৃথিবীতে একদিন সাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে।

আরও পড়ুন