সাম্রাজ্যের কথা উঠলে অবধারিতভাবে আসে রাজা আর রানির কথা। বিশ্বে এমন কয়েকজন রানি ছিলেন, যাঁরা শুধু তাঁদের রূপের কারণে সমাদৃত নন। বরং তাঁরা অসীম সাহস ও শক্তিমত্তা দিয়ে নিজেদের সাম্রাজ্য চালিয়েছেন। কেউবা শাসক স্বামীর সমান্তরালে শাসনকাজে ভূমিকা রেখেছেন। সাহস, রাজনৈতিক সচেতনতা, নেতৃত্বের গুণ আর প্রভাবের জেরে প্রজন্মান্তরে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁরা। তেমনই ১০ ক্ষমতাবান রানিকে নিয়ে এবারের আয়োজন—
প্রথম এলিজাবেথ ছিলেন ব্রিটিশ রানি। একসময় বলা হতো, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য কখনো অস্ত যায় না। অর্থাৎ, এতটাই বিশাল ছিল এ সাম্রাজ্য। বিশাল সাম্রাজ্য সামলানোর কঠিন দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সাহসের সঙ্গে সামলেছেন প্রথম এলিজাবেথ। ১৫৫৮ সালে সিংহাসনে বসেন তিনি। সাম্রাজ্য সামলেছেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত, অর্থাৎ ১৬০৩ সাল পর্যন্ত। ‘ভার্জিন কুইন’ নামেও পরিচিত ছিলেন প্রথম এলিজাবেথ। তাঁর শাসনামলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আর সামরিক অগ্রগতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রাচীন মিসরের উল্লেখযোগ্য শাসকদের একজন রানি ক্লিওপেট্রা। মিসরের টলেমীয় সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সক্রিয় শাসক ধরা হয় তাঁকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫১ থেকে ৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্য নিয়ে রীতিমতো কিংবদন্তি কথাবার্তা রয়েছে। তবে এই শাসক তাঁর বুদ্ধিমত্তা আর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার জন্যও পরিচিত। জুলিয়াস সিজার আর মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্ক ক্লিওপেট্রার কোমল হৃদয় ও প্রেমিকাসুলভ মানসিকতার পরিচয় দেয়।
ব্রিটিশ রানি ছিলেন ভিক্টোরিয়া। তাঁর শাসনামলকে ‘ভিক্টোরিয়ান যুগ’ বলে ডাকা হয়। ভিক্টোরিয়ার হাত ধরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শিল্প খাতে উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটে। সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায়ও এই শাসকের ভূমিকা ছিল। ১৮৩৭ থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৯০১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসনের ভার ছিল রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে।
নেফারতিতি ছিলেন প্রাচীন মিসরের ১৮তম রাজবংশের একজন শক্তিশালী রানি। তিনি আর তাঁর শাসক স্বামী ফারাও আখেনাতেন মিলে তখনকার ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। নেফারতিতি তাঁর অপরূপ সৌন্দর্যের কারণেও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
চীনের একমাত্র সম্রাজ্ঞী ছিলেন উ জেতিয়ান। ৬৯০ থেকে ৭০৫ সাল পর্যন্ত সাম্রাজ্যের ভার ছিল তাঁর হাতে। সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার আগে উ জেতিয়ান ছিলেন সম্রাট গাওঝংয়ের উপপত্নী। সেই অবস্থান থেকে নিজেকে পূর্ণাঙ্গ একজন শাসকে পরিণত করেছিলেন এই নারী।
প্রাচীন মিসরের ফারাও নারীদের একজন হাতশেপসুত। তিনি প্রাচীন মিসরের ১৮তম রাজবংশের ষষ্ঠ ফারাও ছিলেন। ফারাও দ্বিতীয় তুতমোসের স্ত্রী রানি হাতশেপসুত খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৭৯ থেকে ১৪৫৮ সাল পর্যন্ত সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন। বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন সমাধিসৌধ নির্মাণের জন্য খ্যাতি রয়েছে তাঁর।
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, রানি ক্যাথরিন কতটা ‘গ্রেট’ বা খ্যাতিমান ছিলেন। রাশিয়ার শাসক ছিলেন এই নারী। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ১৭৬২ থেকে ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত। ক্যাথরিনের স্বামী ছিলেন রুশ শাসক তৃতীয় পিটার। স্বামীকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন ক্যাথরিন। সরকারি কাজে সংস্কার এবং রাষ্ট্রীয় আধুনিকায়নের জন্য পরিচিত তিনি।
ক্ষমতাবান রানিদের বৈশ্বিক এই তালিকায় একমাত্র ভারতীয় রানি লক্ষ্মীবাঈ। উত্তর ভারতের মারাঠা শাসনাধীন ঝাঁসির শাসক ছিলেন এই নারী। ভারতবর্ষের ইতিহাসে একজন বিপ্লবী নারী হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন লক্ষ্মীবাঈ। ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশবিরোধী সিপাহী বিপ্লবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। তাই, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিদের তালিকায় নাম রয়েছে লক্ষ্ণীবাঈয়ের।
ব্রিটিশ সেল্টিক আইসেনি আদিবাসীদের রানি ছিলেন বোয়াদিসেয়া। একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর রানি হলেও ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি। শক্তিশালী রোমান শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে বোয়াদিসেয়া নিজ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর এই কাজ তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
জর্জিয়ার রানি ছিলেন তামার। ১১৮৪ থেকে ১২১৩ সাল পর্যন্ত তামারের আমলকে ওই সাম্রাজ্যের ‘স্বর্ণযুগ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জর্জিয়ার সংস্কৃতি ও রাজনীতির চরম বিকাশ ঘটেছিল এ সময়। একজন সন্ত হিসেবে সম্মানিত হয়েছিলেন এই নারী।