করাচিতে হামলায় নিহত ৪৫ শিয়া

জঙ্গি হামলার পর করাচির একটি হাসপাতালের বাইরে শোকার্ত কয়েকজন শিয়া মুসলিম নারী। প্রাণহানির সংখ্যার বিচারে এটি পাকিস্তানে এ বছর শিয়াদের ওপর দ্বিতীয় মারাত্মক হামলা l এএফপি
জঙ্গি হামলার পর করাচির একটি হাসপাতালের বাইরে শোকার্ত কয়েকজন শিয়া মুসলিম নারী। প্রাণহানির সংখ্যার বিচারে এটি পাকিস্তানে এ বছর শিয়াদের ওপর দ্বিতীয় মারাত্মক হামলা l এএফপি

পাকিস্তানের করাচিতে একটি বাসে হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৫ জনকে হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা। গতকাল বুধবার এই হামলায় নিহত ব্যক্তিদের সবাই ইসমাইলি শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য। খবর বিবিসি ও ডনের।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে করাচির সাফুরা চকের কাছে ছয়জন বন্দুকধারী চলন্ত বাসটি থামিয়ে ভেতরে ঢুকে গুলি চালায়। হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়।
সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধান গুলাম হায়দার জামালি বলেন, বাসে ৬০ জনের মতো যাত্রী ছিল। মোটরবাইকে আসা বন্দুকধারীরা বাসে ঢুকে হামলা চালায়। এর পর তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।
হামলার শিকার বাসটি ছিল করাচির আল আজহার গার্ডেন কলোনির। এই আবাসিক এলাকায় মূলত ইসমাইলি সম্প্রদায়ের মানুষদেরই বসবাস। বাসটি প্রতিদিনের মতো করাচির ফেডারেল বি এলাকায় অবস্থিত আয়েশা মনজিল ইসমাইলি সেন্টারে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) করাচি হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। সংগঠনটি তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছে, ‘আমাদের সেনারা শিয়া ইসমাইলি অবিশ্বাসীদের বহনকারী বাসে হামলা চালিয়েছে। এতে ৪৩ (আগের হিসাব) ধর্মত্যাগী নিহত হয়েছে।’
তবে ঘটনার পরপর জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) দলছুট গোষ্ঠী জুনদুল্লাহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে যথাযথ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানে ইসমাইলি শিয়াদের ওপর এত বড় ধরনের হামলা এটাই প্রথম।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিন থেকে চারটি মোটরবাইকে চড়ে আসা ছয় থেকে আট ব্যক্তি বাসে নির্বিচারে গুলি চালায়। তবে গোলাপি রঙের বাসটির গায়ে গুলির কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। কারণ, বন্দুকধারীরা বাসের ভেতরে ঢুকেই গুলি চালিয়েছে।
বেঁচে যাওয়া লোকজনের স্বজনেরা বলেছেন, হামলাকারীদের পরনে পুলিশের পোশাক ছিল। প্রাণে রক্ষা পাওয়া একজন বলেন, বন্দুকধারীরা বাসে ওঠার পরপর একজন চিৎকার করে বলে, ‘ওদের সবাইকে মেরে ফেল।’
এই ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা তারিক জাদুন ডনকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত নীল রঙের টুপি উদ্ধার করা হয়েছে।
হামলার পর পরই আক্রান্তদের স্থানীয় মেমন মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেন্টারের নিরাপত্তা কর্মকর্তা রানা এম রাজ্জাক বলেন, ‘বাসের যাত্রীদের মধ্যে এক কিশোরী লুকিয়ে ছিল। তাই সে প্রাণে বেঁচে যায়। যাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের মধ্যে তিন-চারজন বেঁচে আছে। বাকিরা সবাই মারা গেছে।’
ঘটনার পরপর জুনদুল্লাহর মুখপাত্র আহমেদ মারওয়াত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই হামলার দায় স্বীকার করেন। আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের জঙ্গি এই গোষ্ঠীটি সংখ্যালঘুদের ওপর এর আগেও হামলা চালিয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই গোষ্ঠীটি মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতি তাদের সমর্থন জানায়। ওই নভেম্বরেই পাকিস্তানের ওয়াঘা সীমান্তে এবং গত জুলাইয়ে সুক্কুর এলাকায় পাকিস্তানের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রাঙ্গণে হামলা চালানোর দাবি করে তারা।
পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই সুন্নি মুসলিম। শিয়া মুসলিমের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগ।