ইরান-পাকিস্তান উত্তেজনা কি কমাতে পারবে চীন

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়াফাইল ছবি: রয়টার্স

পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। ইরান ও পাকিস্তান—দুই দেশের সঙ্গেই চীনের সম্পর্ক ভালো। উভয় দেশের সঙ্গে রয়েছে চীনের জোরালো সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক। চীনের ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে ইরান ও পাকিস্তান। এরপরও প্রশ্ন, চীন কি এই উত্তেজনা কমাতে পারবে?

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, যদি উভয় পক্ষ (ইরান ও পাকিস্তান) চায়, তাহলে উত্তেজনা প্রশমনে একটি গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী বেইজিং।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের (ইউএসআইপি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক একজন জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ সামির পি লালওয়ানি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই দেশের ওপরই চীনের বেশ ভালো প্রভাব আছে। দুই দেশই আশা করে, ভবিষ্যতে এশিয়ায় চীনই প্রভাবশালী হয়ে উঠুক। বেইজিংয়ের এমন গ্রহণযোগ্যতা আছে, যা দিয়ে তারা পরিস্থিতি শান্ত করতে দুই দেশের নেতাদের বোঝাতে সক্ষম।

আরও পড়ুন

চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশগুলোর অন্যতম পাকিস্তান। মিত্রতার এই সম্পর্ককে দুই দেশই বহুবার ‘সমুদ্রের চেয়ে গভীর’, ‘পর্বতের চেয়ে উঁচু’, ‘মধুর চেয়েও মিষ্টি’ বা ‘ইস্পাতের চেয়েও শক্তিশালী’—এমন নানা অভিধায় আখ্যায়িত করেছে।

এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তেহরান-বেইজিং বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে থাকা ইরানের জ্বালানি তেলেরও সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন।

যদিও সামির পি লালওয়ানি বলছেন, চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ইরান এবং পাকিস্তান প্রতিযোগীও বটে।

আরও পড়ুন

ইরান ও পাকিস্তানের একে অপরের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা অনেককে অবাক করেছে। জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে দুই দেশকে প্রায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে দেখা যায়। এরপরও সামরিক বাহিনীর মধ্যে এভাবে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

ব্যাপক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান ও ইরানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ মিত্রতা আছে। দীর্ঘদিন ধরে ইরানকে সমরাস্ত্রে সজ্জিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে চীন। শুধু সমরাস্ত্র নয়, ইরানকে নানা সমরাস্ত্র প্রযুক্তিও সরবরাহ করছে বেইজিং।

চীন ও পাকিস্তানের ‘ইস্পাত দৃঢ়’ বন্ধুত্বের সম্পর্কেরও মূল ভিত্তি সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক। পাকিস্তানকে প্রচলিত অস্ত্র সরবরাহকারী সবচেয়ে বড় দেশ চীন। একই সঙ্গে বড় ধরনের হামলা বা অভিযান চালানোর মতো সমরাস্ত্র দেওয়ার ক্ষেত্রেও চীন এগিয়ে। গত নভেম্বরেও চীন ও পাকিস্তান বড় পরিসরে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে। একই সময় সবচেয়ে বড় নৌ মহড়াও চালায় দেশ দুটি।

আরও পড়ুন

চীনের জিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলেক্সান্দার দুবেন এএফপিকে বলেন, বেইজিং-ইসলামাবাদ সামরিক মিত্রতার সম্পর্ক দিনের পর দিন জোরালো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে উত্তেজনা শুরু হলে পাকিস্তানকে সংযত হতে বলার মতো প্রভাব তৈরি হয়েছে বেইজিংয়ের।

এদিকে গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের দুই বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করে সবাইকে চমকে দিয়েছিল চীন। তাই চীন তার প্রভাব খাটিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের ক্ষেত্রে ইরানকে রাজি করাতে সক্ষম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

আরও পড়ুন

অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে শান্তি ফেরানো বা ফিলিস্তিনের গাজায় রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েও তেমন সফল না হওয়ায় চীন নতুন করে প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে শুরু হওয়া এই সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে কতটা সফল হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এরপরও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান ও পাকিস্তানের ওপর চীনের যে প্রভাব, তা দিয়ে চলমান এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব।

চীনে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ খালিদ এএফপিকে বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে চীনের জন্য পাকিস্তান ও ইরান দুই দেশই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। চলমান উত্তেজনা সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে স্থিতিশীল একটি সম্পর্ক রয়েছে পাকিস্তানের। আমার মনে হয়, উত্তেজনা প্রশমনের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করবে তারা।’