অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পাকিস্তানের নতুন সরকার
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিয়েছে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। তবে নতুন সরকারের পথচলা কঠিন হবে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির অর্থনীতিবিদেরা। খবর দ্য নিউজের।
সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের (এসডিপিআই) নির্বাহী পরিচালক আবিদ সুলেরি গতকাল রোববার বলেন, স্বল্প মেয়াদে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সংকট দেখা দিতে পারে। নতুন সরকারকে জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ ত্যাগ করতে হবে। ফলে চাহিদা কমাতে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সামঞ্জস্য আনতে হবে।
আবিদ সুলেরি আরও বলেন, জনগণের ওপর চাপ কমাতে ইমরান খান সরকারের নেওয়া কথিত অব্যাহতিমূলক পদক্ষেপগুলো নতুন সরকারকে বাতিল করতে হবে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় নতুন সরকারকে ভারসাম্যমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। যে পরিস্থিতে তাঁরা ক্ষমতা গ্রহণ করত যাচ্ছেন, তাঁদের পক্ষে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে। নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি। কিন্তু স্বল্প মেয়াদে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সংকটও দেখা দেবে। যদি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে দেশ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।
করাচির হাবিব ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক আকদাস আফজাল বলেন, চলতি হিসাবের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতি একটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এ ঘাটতি ২১ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করতে পারে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য এবং পিওএলের (প্রুফ অব লিকুইডিটি) দামের ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকায় চলতি হিসাবের ঘাটতি অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশটির নীতি হার (পলিসি রেট) বাড়াচ্ছে। এতে ডলারের চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা দেবে। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকেরা ন্যূনতম সুদহার অনেক দেরিতে বাড়িয়েছেন। নতুন সরকারকে ব্যাপক চাপের মুখে পড়তে হবে। প্রথমত, সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিক পরিসর অর্জনে তাদের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) আশ্বস্ত করতে হবে। সর্বোপরি তাদের পিওএলের দাম বাড়াতে হবে, যাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা খাকান নাজিব বলেন, পাকিস্তানকে বাহ্যিক খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের রিজার্ভ বাড়াতে হবে, যা ১১.৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। চীন থেকে নেওয়া ঋণের নবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তহবিল বাড়াতে সরকারকে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অংশীদারদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। আইএমএফের সঙ্গে চলমান কর্মসূচি সম্পন্ন করার ওপরও জোর দেন তিনি।
খাকান নাজিব বলেন, জনগণের ওপর চাপ কমাতে মুদ্রানীতি কঠিন না করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্য সরবরাহে নজরদারি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে অবশ্যই কম মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। রুপির যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে খাকান নাজিব বলেন, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে ধীরে ধীরে জ্বালানি ও বিদ্যুতে সাধারণ ভর্তুকি কমানোও দরকার। অবশ্যই বিশেষ ভর্তুকি চালিয়ে যেতে হবে। ২০২৩ সালের বাজেটে দায়মুক্তি না রাখাও সরকারের জন্য জরুরি।
অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গত শনিবার মধ্যরাতে বিদায় নেয় ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার। নতুন নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকারের আদলে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিরোধী দলগুলো। এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পিএমএল-এন সভাপতি শাহবাজ শরিফ।