উপহার তোষাখানায় জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে মুখ খুললেন ইমরান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ছবি: টুইটার

প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালে ইমরান খান উপহার পেয়েছিলেন। সেগুলো তোষাখানায় জমা না দিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। উপহার জমা না দেওয়া নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলো তাঁর সমালোচনা করছে। কেউ কেউ মামলা করার কথাও বলছেন। উপহার তোষাখানায় জমা না দেওয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন ইমরান খান। গতকাল সোমবার তিনি বলেছেন, এসব উপহার ছিল তাঁর। তাই নিজের কাছে রাখা না রাখার বিষয়টিও তাঁর ইচ্ছাধীন। খবর জিয়ো নিউজের।

অনাস্থা ভোটে হেরে ৯ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম। সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপে তোষাখানা বিতর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পুরস্কার, আমার ইচ্ছা।’

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ইমরান খান ক্ষমতায় থাকার সময় তোষাখানা থেকে ১৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি মূল্যের উপহার দুবাইতে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর পর থেকে দেশটিতে তোষাখানার উপহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের কাছ থেকে ১৪ কোটি রুপি মূল্যমানের ৫৮টি উপহার পান ইমরান খান। নামমাত্র অর্থ দিয়ে অথবা কোনো অর্থ না দিয়েই এসব উপহার নিয়ে নেন তিনি।

তবে ইমরান খান বলেন, ‘আমার বাসভবনে একজন প্রেসিডেন্টের পাঠানো একটি উপহার আমি জমা দিয়ে দিয়েছি। আমি তোষাখানা থেকে যা-ই নিয়েছি, তা নথিভুক্ত করা আছে। অর্ধেক মূল্য দিয়ে আমি এসব উপহার কিনে নিয়েছি।’ তিনি বলেন, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তোষাখানা থেকে উপহার গ্রহণের বিধিমালায় পরিবর্তন আনে। দাম বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে।সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদি আমি অর্থ বানাতে চাইতাম, তাহলে আমি আমার বাড়িকে অস্থায়ী কার্যালয় ঘোষণা করতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি।’

এ সময় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, স্টাবলিশমেন্ট তথা সামরিক বাহিনীই তাঁকে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিল। তাঁর এ দাবি সামরিক বাহিনীর বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের দাবি, এসব প্রস্তাব তারা দেয়নি।

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার বলেন, বিরোধী দল ও সরকারের মধ্যে অচলাবস্থার সময় রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সাহায্য চেয়ে সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। তিনি বলেন, মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের অনুরোধ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে যান সেনাপ্রধান ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক।

ইফতিখার আরও বলেন, অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়া, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও অনাস্থা প্রস্তাব তুলে নেওয়ার পর জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় প্রস্তাবকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মত দেন।

সামরিক বাহিনী সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান বলেন, দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু তিনি বলবেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই বলব না। কারণ, পাকিস্তানের শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ সেনাবাহিনী প্রয়োজন। আমরা মুসলিম দেশ। একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানকারী।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর রাশিয়া সফরের বিষয়টি সামরিক বাহিনী অবহিত ছিল। তিনি সফরের আগে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে টেলিফোন করেন। জেনারেল বাজওয়া বলেছিলেন, ‘অবশ্যই আমরা রাশিয়া সফর করব।’

তিন প্রস্তাব নিয়ে আইএসপিআর মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে ইমরান খান বলেন, ‘সামরিক বাহিনী আমাকে তিনটি প্রস্তাব দেয়। আমি নির্বাচনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমি কীভাবে পদত্যাগ ও অনাস্থার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারি?’

বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা ভোট এড়াতে ইমরান খান জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিলেও আদালত সেটা বাতিল করে দেয়। শেষ পর্যন্ত অনাস্থা ভোটে হেরে ৯ এপ্রিল ক্ষমতা হারান তিনি। এরপর ১১ এপ্রিল দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ।

আরও পড়ুন