ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নিজেই নজরদারি যন্ত্র নষ্ট করতে প্ররোচিত হয়েছিলেন: দাবি বলসোনারোর
ব্রাজিলে আটক সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো দাবি করেছেন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই তাঁর মধ্যে অযৌক্তিক সন্দেহপ্রবণতা ও বিভ্রম তৈরি হয়েছিল। আর এ কারণেই তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় তাঁর পায়ে যুক্ত থাকা ইলেক্ট্রনিক নজরদারি যন্ত্রটি নষ্ট করতে প্ররোচিত হয়েছিলেন।
বলসোনারো পালিয়ে যেতে পারেন-এমন আশঙ্কায় পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার এক দিন পর আদালতের নথিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রাজিলের ডানপন্থী নেতা বলসোনারো ২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হন। অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার দায়ে গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় তাঁর আপিলের প্রক্রিয়া চলছে।
বলসোনারো ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে গৃহবন্দি ছিলেন। বলসোনারো পালিয়ে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা জানিয়ে গত শনিবার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
গতকাল রোববার বলসোনারোর বিরুদ্ধে ৩০ মিনিটের শুনানি হয়। এ সময় বলসোনারো দাবি করেন, তাঁর গৃহবন্দি দশা থেকে পালানোর কোনো ইচ্ছা ছিল না এবং নিজের পায়ের গোড়ালিতে যুক্ত থাকা নজরদারি যন্ত্রটি সরানোর চেষ্টাও করেননি।
বলসোনারো আরও বলেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হেঁচকির সমস্যায় ভুগছেন। এর চিকিৎসায় চিকিৎসকেরা তাঁকে অ্যান্টিকনভালসেন্ট ওষুধ দিয়েছিলেন। সে ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তাঁর বিভ্রম হচ্ছিল এবং তাঁর মধ্যে সন্দেহবাতিক দেখা দিয়েছিল। আর এ কারণেই তিনি অযৌক্তিকভাবে সন্দেহ করছিলেন, তাঁর গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্রটির ভেতরে কথা শোনার যন্ত্র স্থাপন করা আছে।
৭০ বছর বয়সী এই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, ঘটনার সময় তিনি একাই ছিলেন। কারণ, তখন তাঁর সঙ্গে বাড়িতে মেয়ে, বড় ভাই এবং এক পরামর্শক থাকলেও তাঁরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন।
আদালতের নথি হাতে পেয়েছে রয়টার্স। নথিতে বলা হয়েছে, ‘সাক্ষী বলেছেন, মাঝরাতের দিকে তিনি অ্যাংকল ব্রেসলেটটিতে খোঁচাখুঁচি করেন। এরপর “স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে” দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছেন।’
রোববারের শুনানি তদারকির দায়িত্বে থাকা বিচারক বলসোনারোকে পুলিশ হেফাজতেই রাখতে বলেছেন। বিচারক মনে করেন, গ্রেপ্তারের সময় কর্মকর্তারা সব প্রযোজ্য আইন যথাযথভাবে মেনে চলেছেন।
বলসোনারোকে ব্রাসিলিয়ার ফেডারেল পুলিশ সদর দপ্তরে ১২ বর্গমিটারের একটি কক্ষে আটক রাখা হয়েছে। সেখানে একটি বিছানা, টিভি, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত বাথরুম রয়েছে। তাঁর মামলাটি বিবেচনা করতে সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেল আজ সোমবার আলোচনায় বসবে।
গতকাল বলসোনারোর আইনজীবীরা আবারও দাবি করেছেন, ডানপন্থী সাবেক এ সেনা কর্মকর্তাকে ‘মানবিক বিবেচনায় গৃহবন্দী’ রাখা হোক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বলসোনারোকে আটকের বিষয়ে জানতেন না। তিনি বলেন, ‘এটাই নাকি ঘটেছে? খুব দুঃখজনক।’
এর আগে বলসোনারোর বিচারকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর প্রতিবাদে তিনি ব্রাজিলের অনেক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তবে গত বৃহস্পতিবার সেই নীতির আংশিক পরিবর্তন করেন ট্রাম্প। ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস, কফি, কোকো ও ফলমূল আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়।
গত শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শিগগিরই ব্রাজিলের বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে আবার বৈঠক করবেন।