ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো কী কারণে আটক হলেন

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোছবি: রয়টার্স

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো গৃহবন্দী অবস্থায় পায়ের গোড়ালিতে লাগানো নজরদারির যন্ত্র (অ্যাঙ্কল মনিটর) একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নষ্ট করে ফেলেছেন। এতে পুলিশ আশঙ্কা করছিল, তিনি পালিয়ে যেতে পারেন। এ কারণেই গতকাল শনিবার দেশটির ফেডারেল পুলিশ তাঁকে আটক করে।

ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থী এই নেতা ২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী লুলা দ্য সিলভার কাছে পরাজিত হন। ক্ষমতায় থাকতে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার দায়ে গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় তাঁর আপিলের প্রক্রিয়া চলছে।

এখন ব্রাসিলিয়ায় ফেডারেল পুলিশ সদর দপ্তরের ১২ বর্গমিটারের একটি কক্ষে বলসোনারোকে রাখা হয়েছে। আটক হওয়ার আগপর্যন্ত পৃথক আরেকটি মামলায় ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে গৃহবন্দী ছিলেন তিনি।

বলসোনারো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদর্শিক মিত্র। তাঁকে রক্ষা করার জন্য ব্রাজিলের ওপর থেকে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এ পদক্ষেপ খুব একটা কাজে দেয়নি বলে মনে হচ্ছে।

ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরায়েস বলসোনারোকে আটকের নির্দেশ দেন।

বিচারপতি বলেন, বলসোনারোর সমর্থকেরা তাঁর বাড়ির বাইরে সমাবেশের পরিকল্পনা করেছিলেন। ফলে তাঁর গৃহবন্দী অবস্থার তদারকি কাজ ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে তিনি বলসোনারোকে আটকের নির্দেশ দিয়েছেন।

বলসোনারো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদর্শিক মিত্র। তাঁকে রক্ষা করার জন্য ব্রাজিলের ওপর থেকে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এ পদক্ষেপ খুব একটা কাজে দেয়নি বলে মনে হচ্ছে।

বিচারপতি নির্দেশনামায় লিখেছেন, ‘অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা গৃহবন্দী দশা ও অন্যান্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে, যা বলসোনারোর পালানোর আশঙ্কা বাড়িয়ে দেবে।’

আরও পড়ুন

বলসোনারোর আইনজীবীরা তাঁর আটকের বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক’ বলে মনে করছেন। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, বলসোনারোর জন্য প্রার্থনা সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা সাংবিধানিক অধিকার। আইনজীবীরা তাঁর আটকের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিচারপতি মোরায়েস তাঁর আদেশে উল্লেখ করেছেন, বলসোনারো আগেও ব্রাসিলিয়ায় আর্জেন্টিনা দূতাবাসে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন—এমন প্রমাণ আদালতের কাছে রয়েছে। বলসোনারোর ছেলে ফেডারেল আইনপ্রণেতা এদুয়ার্দো বলসোনারোসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগী ইতিমধ্যে আদালতের হাত থেকে বাঁচতে ব্রাজিল ছেড়ে পালিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেল আগামীকাল সোমবার আটকের ওই নির্দেশ পর্যালোচনা করবেন।

আরও পড়ুন
বলসোনারোর ছেলে ফেডারেল আইনপ্রণেতা এদুয়ার্দো বলসোনারোসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগী ইতিমধ্যে আদালতের হাত থেকে বাঁচতে ব্রাজিল ছেড়ে পালিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল মধ্যরাতে বলসোনারোর গোড়ালিতে নজরদারি যন্ত্রে অনিয়ম ধরা পড়ে। পরে কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখেন, যন্ত্রটি স্পষ্ট ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পোড়া দাগও দেখতে পান তাঁরা। এক ভিডিওতে বলসোনারো স্বীকার করেছেন, ‘কৌতূহলবশত’ তিনি বিশেষ একটি যন্ত্র দিয়ে সেটি পোড়ানোর চেষ্টা করেছেন। পুলিশ যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করে এবং বিচারপতি তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।

বলসোনারো ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডানপন্থী সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে আটকের ফলে ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরও টানাপোড়েন তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বলসোনারোর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনায় তিনি বিস্মিত ও খুবই অসন্তুষ্ট।

আরও পড়ুন