ব্রাজিলে আবার বিক্ষোভের চেষ্টা ব্যর্থ
ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় গত বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশকে ব্যাপক সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সমর্থকেরা যদি আবার বিক্ষোভ করে, তা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক বলসোনারোর শত শত সমর্থক গত রোববার দেশটির কংগ্রেস ভবন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনে হামলা চালান। এরপর আবার গত বুধবার তাঁরা নতুন করে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন।
গত বুধবার ব্রাজিলের কয়েকটি শহরে বড় বিক্ষোভের ডাক দেন বলসোনারোর সমর্থকেরা। তবে এ বিক্ষোভে খুব বেশি মানুষকে সমবেত হতে দেখা যায়নি। এ সময় দাঙ্গা ঠেকানোর জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত ছিল। আকাশে হেলিকপ্টারকেও টহল দিতে দেখা যায়। হেলিকপ্টার থেকে অস্ত্র তাক করে রেখেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে বলসোনারোর সমর্থকেরা যে বিশাল সমাবেশ ও মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন, তা ব্যর্থ হয়েছে। ব্রাসিলিয়া, রিও ডি জেনিরো ও সাও পাওলোতে লোকজন সমবেত হননি।
সাও পাওলোতে হাজির হয়েছিলেন মাত্র দুজন বিক্ষোভকারী। তাঁদের একজন আইনবিষয়ক শিক্ষার্থী লুইস আগোস্তো গোমস মাকাদো। তিনি বলেন, স্বাধীন মতপ্রকাশ রক্ষার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি বিক্ষোভ করছেন, যা সাংবিধানিক অধিকার। ২০ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি লুলার বিরোধী। তবে গত রোববার বিক্ষোভকারীরা যেভাবে প্রেসিডেন্টের ভবন, কংগ্রেস ভবন ও সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে তিনি।
গত রোববারের মতো ঘটনা ঠেকাতে বুধবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভকারীরা যাতে মন্ত্রীদের বাসভবনগুলোতে হামলা চালাতে না পারেন, সে জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে বলসোনারোর সমর্থকেরা ব্রাসিলিয়া ও অন্যান্য শহরে লোকজনকে সমবেত হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। গত অক্টোবরে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে লুলা দা সিলভার কাছে হেরে গেছেন বলসোনারো। কিন্তু তিনি পরাজয় স্বীকার করেননি। বলসোনারোর সমর্থকেরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করছেন। নির্বাচনের পর থেকে দেশটিতে বিভক্তি আরও বেড়ে গেছে। বলসোনারোর সমর্থকেরা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চাইছেন এবং অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লুলাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
গত রোববারের হামলাকে লুলার পক্ষ থেকে ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ধর্মান্ধ ফ্যাসিবাদীরা ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ তিন ভবনে হামলার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, সাংবাদিকদের মারধর করেছে এবং জেনেশুনে বিভিন্ন ভবনে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।
গত অক্টোবর মাস থেকে ব্রাসিলিয়ার সেনাক্যাম্পের বাইরে তাঁবু গেড়ে অবস্থান করা বলসোনারোর সমর্থকদের সোমবার উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। এরপর থেকে ব্রাসিলিয়া অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে।
সাও পাওলোভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান অ্যাটলাস ইনটেলিজেন্সের করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন ব্রাজিলীয়র মধ্যে একজন রোববারের এ হামলাকে সমর্থন করেন।
ব্রাজিলের উপবিচারমন্ত্রী রিকার্ডো ক্যাপেল্লি বলেন, ব্রাসিলিয়ায় আবার হামলা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সব সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়। ৮ জানুয়ারির মতো অগ্রহণযোগ্য আর কোনো ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না। রোববারের ওই হামলার পর ক্যাপেল্লিকে ব্রাসিলিয়া নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব দিয়েছেন লুলা।
কর্তৃপক্ষ এ দাঙ্গার সংগঠক ও অর্থদাতাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে। লুলা গত বুধবার ব্রাসিলিয়ায় কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, একদল পাগল লোক এখনো বিক্ষোভ করছে। তারা বোঝে না যে নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ এ দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বলসোনারো প্রশাসনের সাবেক বিচারমন্ত্রী অ্যান্ডারসন তোরেস। গত রোববার ব্রাসিলিয়ার পুলিশপ্রধান ফাবিও আগোস্তোর সঙ্গে অ্যান্ডারসনকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আগোস্তোকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অ্যান্ডারসন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তোরেসের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও বিক্ষোভকারীদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রয়েছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগেই বলসোনারো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় যাওয়ার জন্য ব্রাজিল ছাড়েন। গত সোমবার পেটে ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বলসোনারো এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তবে তিনি দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বলসোনারোর সমর্থকদের হামলার প্রতিবাদে গতকাল ব্রাজিলের অন্যতম বড় শহর সাও পাওলোতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সমর্থনে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বলসোনারোকে কারাগারে পাঠানোর জন্য স্লোগান দেওয়া হয়।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর উগ্র ডানপন্থী দলের নেতা বলেছেন, সরকারি ভবনে হামলা ও লুটতরাজে দলের কেউ জড়িত থাকলে, তাঁদের অবিলম্বে বহিষ্কার করা হবে। তবে এ ঘটনার জন্য ব্রাজিলের নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।
দাঙ্গার পরে আটক প্রাথমিক ১ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে এখনো ৬০০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।