ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে হামলার দায়ে অভিযুক্ত দাঙ্গাবাজদের শাস্তি দিতে চাইছে ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনোরোর প্রশাসনের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ দুজনের মধ্যে একজন কট্টর ডানপন্থী নেতা জইর বলসোনারোর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

গত রোববার ব্রাজিলের কংগ্রেস ভবন, প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনে হামলা চালান বলসোনারোর সমর্থকেরা। ওই হামলার পরপরই ব্রাসিলিয়ার নিরাপত্তাপ্রধান অ্যান্ডারসন তোরেসকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি বলসোনারোর প্রশাসনে বিচারমন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি ব্রাসিলিয়ার নিরাপত্তাপ্রধান পদে আসেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বলসোনারোর সমর্থকেরা কংগ্রেসে হামলা চালালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেকজান্দ্রে মোরেস বলেন, বলসোনারোর সমর্থকদেরে তিনটি ভবনে হামলার ঘটনা ঠেকাতে অ্যান্ডারসনের ব্যর্থতা সম্ভাব্য অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের এই বিচারক ব্রাসিলিয়ার সামরিক পুলিশের নেতৃত্বে থাকা ফাবিও আগোস্তোর বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। রোববারের সহিংসতার পর তাঁকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আগোস্তোকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

বিচারক আলেকজান্দ্রে মোরেস বলেন, ব্রাজিলের গণতন্ত্রে সন্ত্রাসীদের আঘাত করতে দেওয়া হবে না। তাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করার সুযোগও দেওয়া হবে না।

ব্রাসিলিয়ায় হামলার সময় ব্রাসিলিয়ার নিরাপত্তাপ্রধান অ্যান্ডারসন তোরেস যুক্তরাষ্ট্রে ছুটিতে ছিলেন। গত মঙ্গলবার তিনি এ ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ব্রাজিলে ফিরে তিনি নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবেন।

গত মাসের শেষ দিক থেকে বলসোনারোও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ১ জানুয়ারি তিনি লুলার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। পেটের ব্যথা নিয়ে তিনি গত সোমবার ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। অবশ্য এক দিন পরেই তিনি ছাড়া পেয়েছেন।

অধিকাংশ গ্রেপ্তারকৃতকে ছাড়া হয়েছে

ব্রাসিলিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী হামলা ঠেকাতে যে ভূমিকা রেখেছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা হামলাকারীদের ঠেকানোর পরবির্তে তাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত।

বিচারমন্ত্রী ফ্লাভিও দিনো বলেছেন, লুটপাটের ঘটনায় ধরা পড়েনি এমন ৫০ জনকে ধরতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া দাঙ্গায় উসকানিতে যুক্ত লোকজনকেও খোঁজা হচ্ছে। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ পুলিশ ১ হাজার ৫০০ জনকে আটক করেছিল। তবে গত মঙ্গলবার ৫৯৯ জনকে মানবতার খাতিরে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ, অসুস্থ ও গৃহহীন ব্যক্তি রয়েছে।

রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় বলসোনারোর সমর্থকেরা যেখানে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন, গত সোমবার সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় আটক করা হয় অধিকাংশ ব্যক্তিকে।

ব্রাজিলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে হামলার এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা একে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। রোববারের হামলার ঘটনার পর সোমবার তিনি দেশটির গভর্নর ও বিচারপতিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। গত মঙ্গলবার তিনি টুইট করে বলেন, ‘ব্রাজিলের গণতন্ত্র অটুট থাকবে। আসুন দেশকে বিদ্বেষ ও অনৈক্য থেকে উদ্ধার করি।’

পুলিশ বলছে, ৫২৭ জনকে আটক রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের বাসে করে নির্দিষ্ট স্টেশনে ছেড়ে আসা হচ্ছে, যাতে তারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারে।

এ ধরনের একটি বাস থেকে বলসোনারোর সমর্থকদের বিজয়চিহ্ন দেখাতে ও বলতে শোনা যায়, ‘বিজয় আমাদের।’ বলসোনারোর এক সমর্থক বলেন, ‘আমরা এখন বিশ্রাম নেব। এরপর আরেকটি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেব। কারণ, তারা ভাবে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে। কিন্তু তারা ভুল ভাবছে।’

সোমবার ব্রাসিলিয়ায় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের বাইরে বলসোনারোর সমর্থকদের শিবির গুঁড়িয়ে দিতে শত শত সৈন্য ও পুলিশ জড়ো করা হয়। সেখানে তিন হাজারের বেশি সমর্থক তাঁবু খাটিয়ে ঘাঁটি গড়ে তোলেন। এখান থেকেই তিন ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।

বলসোনারোর অভিযোগ, ব্রাজিলের আদালত এবং নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি নির্বাচনে হেরেছেন।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে লুলা গত সোমবার কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রাজিলের গণতন্ত্রকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি টেলিফোনে লুলাকে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।