আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ চায় দক্ষিণ আফ্রিকা

ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাড়িতে নিয়ে চলে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। গতকাল গাজার খান ইউনিসেছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার জেরে উপত্যকাটিতে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দ্বারস্থ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গাজার বাসিন্দাদের ‘অনাহার’ রুখতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আদালতটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

প্রিটোরিয়ার ভাষ্য, গাজা পরিস্থিতিতে যেসব পরিবর্তন এসেছে এবং নতুন যেসব সত্যি সামনে এসেছে, তারই আলোকে আইসিজেতে ফিরতে বাধ্য হয়েছে তারা। বিশেষ করে গাজায় ব্যাপক অনাহার পরিস্থিতি তাদের আদালতের দ্বারস্থ করেছে। উপত্যকাটিতে অনাহারে মৃত্যুর মুখে পড়া ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে এটাই হতে পারে আদালতটির জন্য সবশেষ সুযোগ।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপত্যকাটিতে ৩০ হাজার ৮০০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭২ হাজারের বেশি। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলা শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে অন্তত ১৮ জন খাবার ও পানির সংকটে মারা গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের।

অনাহার রুখতে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি গাজায় ‘অবিলম্বে লড়াই বন্ধের’ নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। একই সঙ্গে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তি, ইসরায়েলের গাজা অবরোধের অবসান এবং উপত্যকাটিতে জরুরি ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ করে দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রিটোরিয়া।

১৯৪৬ সালে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে প্রতিষ্ঠা করা হয় আইসিজে। এ আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য একাধিক দেশের মধ্যে বিবাদের সমাধান করা। আইসিজের দেওয়া রায় মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্যদেশগুলোর। তবে রায় বাস্তবায়নে জোর খাটাতে পারেন না আদালতটি। যেমন রাশিয়াকে ইউক্রেনে অভিযান থামাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আইসিজে। তবে কোনো লাভ হয়নি।

এর আগে গত বছরের শেষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ এনে আইসিজেতে মামলা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মামলার শুনানিতে ইসরায়েলের হামলা বন্ধে আহ্বানও জানানো হয়েছিল। পরে গত জানুয়ারি মাসে গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেন আদালত। তবে হামলা বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

আরও পড়ুন

মিসর ছাড়লেন হামাস প্রতিনিধিরা

আজ মিসরের রাজধানী কায়রো ছেড়েছে হামাসের প্রতিনিধিদল। গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে সেখানে চার দিনব্যাপী আলোচনা চলছিল। এতে মধ্যস্থতা করছিল মিসর ও কাতার। তবে ইসরায়েলের অনুপস্থিতিতে ওই আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধান আসেনি। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তুলে হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা চলতে থাকবে।

আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস। এ সময় ৪০ দিন যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কায়রোয় ওই আলোচনা চলছিল। চুক্তি হলে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা প্রায় ২৪০ জনের একাংশকে মুক্তি দেওয়া হতো। বিনিময়ে ইসরায়েলের বন্দী থাকা কিছু ফিলিস্তিনিও মুক্তি পেতেন।

আরও পড়ুন

তবে একটি সূত্র জানিয়েছিল, কায়রো আলোচনায় অংশ নেয়নি ইসরায়েল। কারণ, তাদের দাবি অনুযায়ী গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলি বন্দীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে রাজি হয়নি হামাস। হামাসের ভাষ্য, জিম্মি ব্যক্তিরা গাজার যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন স্থানে রয়েছেন। তাই যুদ্ধবিরতি ছাড়া তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।

কোনো সমঝোতা ছাড়া কায়রো আলোচনা শেষ হলেও ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা—এখনো নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘আমরা একটি চুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

আরও পড়ুন