যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে দায়িত্বরত দুই ন্যাশনাল গার্ডকে গুলি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ দুজন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
কী কারণে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলি করা হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের ‘নিশানা করে গুলি করা হয়েছিল।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনাকে ‘জঘন্য হামলা’ ও ‘শয়তানের কাজ, বিদ্বেষ থেকে হামলা ও সন্ত্রাসী হামলা’ বলে বর্ণনা করে এর নিন্দা জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের কাছে ঠিক কী ঘটেছিল, সন্দেহভাজন হামলাকারী কে—এসব নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
ওয়াশিংটন ডিসিতে কী ঘটেছিল
পুলিশ বলেছে, স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে সন্দেহভাজন এক হামলাকারী এক ন্যাশনাল গার্ডকে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়েন।
সংঘর্ষের সময় সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীও গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি পুলিশের হেফাজতে আছেন।
পুলিশের নির্বাহী সহকারী প্রধান জেফরি ক্যারল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, হামলাকারী একজনই ছিলেন। তিনি অস্ত্র হাতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের ওপর আকস্মিক হামলা চালিয়েছেন।’
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ন্যাশনাল গার্ডের তিন সদস্যের কাছে এগিয়ে যান। তিনি গুলি ছোড়া শুরু করার আগপর্যন্ত খুব সম্ভবত রক্ষীরা তাঁকে খেয়ালই করেননি। হামলাকারী প্রথমে এক ন্যাশনাল গার্ডকে গুলি করেন, তারপর আরেকজনকে।
পালিয়ে যাওয়া আফগানদের মধ্যে অনেকেই মার্কিন সেনাদের সঙ্গে দোভাষী, গাড়িচালক বা সহায়ককর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তাঁদের ভয় ছিল, তাঁরা লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন।
এরপর হামলাকারীকে প্রথমবার গুলি ছোড়া ন্যাশনাল গার্ডের ওপর আরেক দফা গুলি চালানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে তৃতীয় গার্ড হামলাকারীর দিকে পাল্টা গুলি চালান।
এ ঘটনার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসিতে ছিলেন না। তিনি ফ্লোরিডায় অবস্থান করছিলেন।
জননিরাপত্তার কথা বলে ট্রাম্প রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রায় ২ হাজার ২০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন। এর মধ্যে ডিসি ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ৯২৫ জন। অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকে আরও ১ হাজার ২০০ জনের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য আনা হয়েছে।
ন্যাশনাল গার্ড কী
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একটি অংশ ন্যাশনাল গার্ড। কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও দেশের প্রেসিডেন্ট, দুজনের অধীনেই কাজ করে এই বাহিনী। ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা মার্কিন সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর রিজার্ভ (সংরক্ষিত) সেনাদের অংশ।
খণ্ডকালীন ভিত্তিতে কাজ করেন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। যুদ্ধ বা সহায়তা অভিযানের জন্য তাঁদের বিদেশে মোতায়েন করা হতে পারে। তবে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে ন্যাশনাল গার্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য ও অঞ্চলের (ওয়াশিংটন ডিসিসহ) নিজস্ব ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী রয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিতে পারেন। এ কারণে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্যান্য শাখা থেকে ন্যাশনাল গার্ডের কার্যক্রম আলাদা।
গতকাল ন্যাশনাল গার্ডের যে দুই সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাঁরা ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য।
গত সপ্তাহে এক ফেডারেল বিচারক ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ওপর একটি অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। ওই নির্দেশে বিচারক বলেন, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ সম্ভবত আইনবিরোধী।
গতকাল গুলির ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করার চেষ্টা করেছে।
কোথায় গুলি চলেছে
গতকাল গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে ফারাগুট স্কয়ারে। জায়গাটি হোয়াইট হাউস ও একটি ব্যস্ত গণপরিবহন সেন্টারের কাছে, ফলে সেখানে প্রচুর ভিড় লেগে থাকে, অনেক পর্যটকও দেখা যায়।
সন্দেহভাজন হামলাকারী কে
তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম রহমানুল্লাহ লাকানওয়াল, বয়স ২৯ বছর।
মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ) ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, রহমানুল্লাহ লাকানওয়াল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি ‘অপারেশন অ্যালাইজ ওয়েলকাম’ প্রকল্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।
আমাদের এখন আফগানিস্তান থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করা প্রতিটি এলিয়নকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে
ওই বছরের আগস্টে তালেবান আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করলে জো বাইডেন প্রশাসন ‘অপারেশন অ্যালাইজ ওয়েলকাম’ প্রকল্পের অধীনে আফগানিস্তান থেকে হাজার হাজার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যায়। সে সময় জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা হামলার শিকার হওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ রাতে আমি আপনাদের বলতে পারি, তারা হাতে পাওয়া সর্বোচ্চ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত করেছে, তাদের হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন একজন বিদেশি। তিনি আফগানিস্তান থেকে আমাদের দেশে এসেছেন, যে দেশটি পৃথিবীতে এক নরক।’
অপারেশন অ্যালাইজ ওয়েলকাম কী
অপারেশন অ্যালাইজ ওয়েলকাম ছিল ২০২১ সালে চালু করা একটি মার্কিন কর্মসূচি। তালেবান আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর যেসব আফগান দেশ থেকে পালিয়ে যান, তাঁদের সাহায্য করতে এটি তৈরি করা হয়।
পালিয়ে যাওয়া আফগানদের অনেকেই মার্কিন সেনাদের সঙ্গে দোভাষী, গাড়িচালক বা সহায়ককর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তাঁদের ভয় ছিল, তাঁরা লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন। এ ছাড়া দেশটির সাংবাদিক ও নারী অধিকারকর্মীরা নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ন্যাশনাল গার্ডের তিন সদস্যের কাছে এগিয়ে যান। তিনি গুলি ছোড়া শুরু করার আগপর্যন্ত খুব সম্ভবত রক্ষীরা তাঁকে খেয়ালই করেননি। হামলাকারী প্রথমে এক ন্যাশনাল গার্ডকে গুলি করেন, তারপর আরেকজনকে।
এই প্রকল্পের অধীনে হাজার হাজার আফগানকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে সেখানে তাঁদের চিকিৎসা, শারীরিক পরীক্ষা, টিকা দেওয়া ও অভিবাসন–সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
মার্কিন কংগ্রেসের এক হিসাব অনুযায়ী, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ৭৬ হাজার আফগানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়। প্রায় এক বছর ধরে এই প্রকল্পের কাজ চলেছে।
এরপর কী
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তাঁর বিতাড়নের প্রচেষ্টা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তিনি আরও বলেন, তালেবান ক্ষমতা দখলের পর যেসব আফগান যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, প্রশাসন থেকে তাঁদের আবার যাচাই–বাছাই করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমাদের এখন আফগানিস্তান থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করা প্রতিটি এলিয়েনকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।’
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা জানিয়েছে, তারা সব আফগানের অভিবাসন আবেদন প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিরাপত্তা ও পুনর্মূল্যায়ন কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ঘোষণা করেছেন, নিরাপত্তা জোরদার করতে ও জনগণকে আশ্বস্ত করতে ওয়াশিংটন ডিসিতে আরও ৫০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হবে।