তাইওয়ান নিয়ে যে কারণে উত্তেজনা এড়ালেন সি-বাইডেন

ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তাইওয়ান ইস্যুতে ‘আগুন নিয়ে না খেলার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে সির এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও দুই নেতা তাইওয়ান ইস্যুতে উসকানিমূলক বাগাড়ম্বর অনেকটাই এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এর পেছনে অর্থনৈতিক সংকটেরও একটা ভূমিকা রয়েছে। অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্ত দুই পক্ষই তাইওয়ান নিয়ে নতুন কোনো সংকট চায় না।

রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে। রয়টার্স বলছে, বাইডেনকে তাইওয়ান ইস্যুতে আগুন নিয়ে না খেলতে সি স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।  তবে এটা নতুন নয়। গত নভেম্বরে দুই নেতার ভার্চ্যুয়াল বৈঠকেও এমন মন্তব্য এসেছিল। ওই বৈঠকেও ঠিক এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

বৈঠকের বিষয়ে বেইজিংয়ের দেওয়া বিবৃতির বরাত দিয়ে ‘জার্মান মার্শাল ফান্ড অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’–এর চীন–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বনি গ্ল্যাসের বলেন, ‘তাইওয়ান নিয়ে আলাপের অংশটি একেবারে গত বৈঠকের আলাপের মতোই।’

সাংবাদিকদের দেওয়া ব্রিফিংয়ে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ বৈঠকের তিন অংশের আলোচনার একটি ছিল তাইওয়ান নিয়ে। বাকি দুটি অংশ ছিল ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ যুক্তরাষ্ট্র-চীন সহযোগিতার সম্ভাব্য বিষয়গুলো নিয়ে। মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরের বিষয়টি নিয়ে বাইডেন ও সি সরাসরি আলোচনা করেছেন কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা। তাঁর চেয়ে তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ওয়াশিংটন দীর্ঘদিনের ‘এক চীন নীতি’ বজায় রেখেছে বলে জানিয়েছেন বাইডেন। এ নীতির অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে বেইজিংকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাইপেকে নয়।

‘সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির’ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা ফেলো জ্যাকব স্টোকস বলেন, ‘আমার উপলব্ধি হলো এই বৈঠক না হলে উত্তেজনা যে পর্যায়ের হতো, দুই নেতার সরাসরি কথা বলার ফলে উত্তেজনার সেই পারদ সম্ভবত কিছুটা হলেও কমেছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনের কিছু ইস্যু রয়ে গেছে। যেমন স্পিকার পেলোসির তাইওয়ানে সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।’

পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বেইজিং। পেলোসিও বাইডেনের মতো একজন ডেমোক্র্যাট। তিনি বেইজিংয়ের পুরোনো সমালোচক, বিশেষ করে মানবাধিকার ইস্যুতে। কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টেই তাইওয়ানে সফরে যেতে পারেন পেলোসি। তাঁর এ সফর হবে নাটকীয়। তবে নজিরবিহীন কিছু নয়। দ্বীপটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়টি জানাতে পেলোসির এ সফর। রিপাবলিকান নিউট গিংরিচ ১৯৯৭ সালে তাইওয়ান সফরকারী সর্বশেষ হাউস স্পিকার ছিলেন।

আরও পড়ুন

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময় এ ধরনের সফর বড় ধরনের সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি পরিস্থিতি সংঘাতের দিকেও যেতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ তাইওয়ান নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের মুখে রয়েছে বলে মনে করেন না।

অনেকটা বিরক্তির সঙ্গে রক্ষণশীল ‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের’ চীন–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দিয়ান চেং বলেন, ‘দুঃস্বপ্নের অলীক কল্পনা আছে। সম্ভবত তারা স্পিকার পেলোসির উড়োজাহাজ ভূপাতিত করবে। যখন তিনি দ্বীপটিতে থাকবেন, সম্ভবত তখন তারা সেখানে আগ্রাসন চালাবে। আমরা টম ক্ল্যান্সির উপন্যাসের (সামরিক কল্পবিজ্ঞানের) জগতে নেই।’

চেং বলেন, খুব সম্ভবত চীন মধ্যরেখায় সামরিক ফ্লাইট বাড়াতে পারে। এই মধ্যরেখা ১৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত তাইওয়ান প্রণালিকে বিভক্ত করেছে, যা চীনকে তাইওয়ান থেকে পৃথক করেছে। অথবা তাইওয়ানের ওপর আধিপত্য বোঝাতে চীনের যুদ্ধবিমানগুলো দ্বীপটি প্রদক্ষিণ করতে পারে।

আরও পড়ুন

চীন ১৯৯৭ সাল থেকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। হোয়াইট হাউস পেলোসির দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছে। এই সফরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজনীয় ‘সব প্রেক্ষাপট’ তাঁর জানাশোনায় আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে চায় হোয়াইট হাউস।

দুই নেতা তাইওয়ান ইস্যুতে উসকানিমূলক বাগাড়ম্বর অনেকটাই এড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
ছবি: রয়টার্স

ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির’ চীন প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ ফেলো ক্রেইগ সিংলেটন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু ওয়াশিংটন ও বেইজিং অর্থনৈতিক স্থবিরতা মোকাবিলা করছে, বাইডেন এবং সি উভয়ই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে তীব্র অভ্যন্তরীণ চাপে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চীনের দাপ্তরিক বিবৃতিতে খুব কম ইঙ্গিত আছে যে চীন এ সময়ে আরও গুরুতর সামরিক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে, যদিও এ অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে। অনলাইন কিংবা দেশীয় সংবাদমাধ্যমেও এমন পদক্ষেপের ইঙ্গিত নেই।’