‘শিশু হত্যার ধারণায় বিকারগ্রস্ত’ মিনেসোটার হামলাকারী, ছিলেন ইসরায়েলবিরোধী: পুলিশ

ম্যারি গ্রেস ওয়েস্টম্যান, রবিন ওয়েস্টম্যান (ডানে)ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একটি ক্যাথলিক চার্চ ও স্কুলে প্রার্থনার সময় শিশুদের ওপর হামলাকারী বন্দুকধারী ‘শিশু হত্যার ধারণায় বাতিকগ্রস্ত’ ছিলেন। হামলার ঘটনা তদন্তকারী কর্মকর্তারা এমনটা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সময় গত বুধবার সকালে মিনেসোটায় অ্যানানসিয়েশন চার্চ ও ক্যাথলিক স্কুলে ২৩ বছর বয়সী রবিন ওয়েস্টম্যান এ হামলা চালান। হামলায় ২ শিশু নিহত হয়, আহত হন আরও ১৮ জন। পরে ঘটনাস্থলেই নিজের গুলিতে নিজেই আত্মঘাতী হন হামলাকারী।

মিনিয়াপোলিস শহরের পুলিশপ্রধান ব্রায়ান ও’হারা বলেছেন, হামলার পেছনে রবিন ওয়েস্টম্যানের নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বলে মনে হচ্ছে।

পুলিশপ্রধান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘হামলাকারী আমাদের সবাইকে ঘৃণার চোখে দেখতেন বলে মনে হচ্ছে। অন্য কোনো কিছু নয়; বরং শিশুদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি।’

নিহত দুই শিশুর পরিবার তাদের মরদেহ শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে এক শিশুর নাম ফ্লেচার মারকেল। তার বয়স আট বছর। অন্য শিশুটি ১০ বছর বয়সী হারপার ময়স্কি।

ফ্লেচারের বাবা জেসি মারকেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুধবার এক কাপুরুষ আমাদের আট বছর বয়সী ছেলে ফ্লেচারকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।’

জেসি আরও বলেন, ‘ফ্লেচার তার পরিবার ও বন্ধুদের ভালোবাসত। সে মাছ ধরা, রান্না করা এবং যেকোনো খেলাধুলা পছন্দ করত।’

অশ্রুসিক্ত জেসি ধরা গলায় বলেন, ‘ফ্লেচার, আমরা তোমাকে ভালোবাসি। তুমি সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকবে।’

হারপার ময়স্কির বাবা মাইকেল ময়স্কি ও মা জ্যাকি ফ্লাভিন এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁদের আদরের ১০ বছর বয়সী মেয়েটি ছিল মেধাবী ও হাসিখুশি। তার হাসি, উদারতা এবং প্রাণচাঞ্চল্য চেনা পরিচিত মানুষদের মুগ্ধ করত।

আরও পড়ুন

ময়স্কি দম্পতি বলেন, ‘পরিবার হিসেবে আমরা বিধ্বস্ত। আমাদের দুঃখের গভীরতা বর্ণনার শব্দ নেই।’ হারপারের স্মৃতি বন্দুক সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগকে উৎসাহিত করবে বলে প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

কর্তৃপক্ষ এখনো সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর সম্পর্কে খুব কম তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে তারা বলেছে, রবিন ওয়েস্টম্যান ওই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর মা সেখানে কাজ করতেন।

ধারণা করা হচ্ছে, বন্দুকধারী রবিন ওয়েস্টম্যান ঘটনার দিন গির্জার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। গির্জার পাশেই ছিল স্কুল। স্কুলের জানালা দিয়ে শিশুদের লক্ষ্য করে তিনটি অস্ত্র দিয়ে কয়েক ডজন গুলি ছোড়েন রবিন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি স্মোক গ্রেনেডও উদ্ধার করেছে।

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা শিশুদের রক্তাক্ত অবস্থায় গির্জা থেকে পালাতে এবং আশপাশের মানুষদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাতে দেখেছেন।

আরও পড়ুন

গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মিনেসোটার ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জোসেফ থম্পসন বলেছেন, বন্দুকধারী ইহুদি সম্প্রদায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন।

২০২০ সালে বন্দুকধারীর নাম আইনি প্রক্রিয়ায় রবার্ট থেকে রবিনে পরিবর্তন করা হয়। সে সময় নাম পরিবর্তনের অনুমোদন দেওয়া বিচারক লিখেছিলেন, ‘এই অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুটি মেয়ে হিসেবে চিহ্নিত হবে।’ তবে হামলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় কয়েকজন ফেডারেল কর্মকর্তা ও পুলিশ তাঁকে পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল এ হামলাকে ‘ঘৃণাভিত্তিক মতাদর্শে প্রভাবিত দেশীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, বন্দুকধারী অস্ত্র ও চিরকুটে ধর্মবিরোধী ও ক্যাথলিক সম্প্রদায়বিরোধী নানা লেখা লিখে রেখেছিলেন।

প্যাটেল বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিও ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন। অস্ত্রে লেখা ছিল ‘ইসরায়েলের পতন হোক’, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, এমনকি গণহত্যার কথাও স্পষ্ট ভাষায় লেখা ছিল। বন্দুকের একটি ম্যাগাজিনে লেখা ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রকাশ্য আহ্বানের কথা।

আক্রমণে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো বৈধভাবে কেনা হয়েছিল। হামলাকারীর নাম কোনো সরকারি নজরদারি তালিকায় ছিল না। এ ছাড়া তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যজনিত কোনো সমস্যা বা চিকিৎসার তথ্যও পুলিশের জানা নেই।

আরও পড়ুন