ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ নিকোলসকে পেটাচ্ছে ও লাথি মারছে

টায়ার নিকোলসের ছবির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মা ও সৎ বাবা
ছবি: রয়টার্স

পুলিশ সদস্যরা গাড়ি থেকে একজনকে বের করার পর লাথি–ঘুষি মারতে থাকেন। কয়েক মিনিট ধরে এই নির্যাতন চলতে থাকে। পুলিশের মারধরের একপর্যায়ে তীব্র যন্ত্রণায় ‘মা’ বলে ডেকে ওঠেন গাড়িচালক। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের কৃষ্ণাঙ্গ ওই ব্যক্তির নাম টায়ার নিকোলস। তাঁর বয়স ২৯ বছর। ঘটনাটি ঘটে ৭ জানুয়ারি। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় এ ঘটনা ঘটে। এর তিন দিন পর হাসপাতালে মারা যান তিনি। নিকোলসের মৃত্যুর জন্য পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরাও সবাই কৃষ্ণাঙ্গ। এরই মধ্যে পাঁচজনকেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

পুলিশের নির্যাতনের পর কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ টায়ার নিকোলসের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেশটির মানুষ। এর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামের আরেক ব্যক্তির পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার ঘটনাটি। জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগ এনে সে বছরের ২৫ মে তাঁকে আটক করে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরের পুলিশ। আটকের পর ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে সড়কে চেপে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না বলে জানান তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

নিকোলসের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভ হয়েছে অঙ্গরাজ্যের মেমফিস শহরে। নিকোলসের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। এদিকে নিকোলসের ওপর নির্যাতনের সময়ের একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ।

পুলিশের প্রকাশ করা ভিডিওতে উঠে এসেছে টায়ার নিকোলসের ওপর নির্যাতনের চিত্র
ছবি: রয়টার্স

নিকোলসের ওপর নির্যাতনের ওই ভিডিওগুলো পুলিশ কর্মকর্তাদের শরীরে থাকা ক্যামেরায় ধারণ করা। শুক্রবার সেগুলো চার ধাপে প্রকাশ করা হয়। ভিডিওগুলোর প্রথমটিতে দেখা যায়, নিকোলসের গাড়ি থামানোর পর তাঁকে গাড়িটি থেকে বের হতে বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। এরপরও পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে উপুড় হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলেন। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় নিকোলাস সেখান থেকে পালিয়ে যান।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিকোলসকে আবার আটক করে মাটিতে ফেলে দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে মাটিতে পড়ে নড়াচড়া করতে দেখা যায়। পরে নিথর অবস্থায় নিকোলসকে পুলিশের একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপর এক পুলিশ কর্মকর্তার শরীরে থাকা ক্যামেরাতেও নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে। ওই ভিডিওতে মারধরের সময় নিকোলসকে ‘মা’ বলে ডাকতে শোনা যায়। সব শেষ একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিকোলস মারাত্মক আহত হয়েছেন এবং তাঁর মাথায় রক্ত। এ সময় তিনি কোনো কথা বলছিলেন না।

টায়ার নিকোলসের মৃত্যুতে মেমফিস শহরে চলছে বিক্ষোভ
ছবি: রয়টার্স

এদিকে ভিডিওগুলো প্রকাশের পর শুক্রবার জো বাইডেন বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ এবং খুবই কষ্ট পেয়েছেন। নিকোলসের মৃত্যু ঘিরে চলমান বিক্ষোভ সংঘাতে মোড় নিতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

একই দিনে টায়ার নিকোলসের মা ও সৎবাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ওই ফোনালাপের বিষয়ে তিনি বলেন, নিকোলাসের মা রোভন ওয়েলস অবশ্যই বড় বেদনার মধ্যে রয়েছেন। ছেলের মৃত্যুর জন্য তাঁকে সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। নিকোলসের মা–ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কোনো সংঘাত চান না।

মেমফিস পুলিশ বিভাগের সাবেক পাঁচ কর্মকর্তা
ছবি: মেমফিস পুলিশ বিভাগ

বিক্ষোভ যেন সংঘাতে রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সচেতন হোয়াইট হাউসও। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জ্যঁ-পিয়েরের ভাষ্যমতে, খারাপ পরিস্থিতি দেখা দিলে তা সামলানোর জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি বড় শহরের মেয়রদেরও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন