যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন তিনি। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে সম্পদশালী প্রেসিডেন্টও তিনি। দেশটির শীর্ষ ১০ সম্পদশালী প্রেসিডেন্টের তালিকায় আছেন জর্জ ওয়াশিংটন থেকে বিল ক্লিনটনও। আসুন, একনজরে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদশালী ১০ প্রেসিডেন্টের নাম ও তাঁদের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নিই—
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গতকাল আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসে ঢুকলেন তিনি। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য আবাসন ব্যবসায়ী। গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি খাতে তাঁর বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেওয়া ট্রাম্প ব্যবসা থেকে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলার। যদিও ফোর্বসের হিসাবে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পের নিট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি ডলারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত প্রেসিডেন্টদের একজন হচ্ছেন জন এফ কেনেডি। আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার আগে ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৩ সালে পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কেনেডির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ইতিহাসবিদ ডগলাস ব্রিঙ্কলে বলছেন, জন এফ কেনেডি তাঁর সম্পদের বেশির ভাগ ধনী বাবার কাছে থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শুরুর দিককার বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট ধনী ভূস্বামী ছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটনও তেমনটাই ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতায় ছিলেন ১৭৮৯ সাল থেকে ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। ইতিহাসবিদ ডগলাস ব্রিঙ্কলে বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রেসিডেন্ট ধনী ছিলেন। বিপুল পরিমাণ জমির মালিক ছিলেন তিনি।’
জর্জ ওয়াশিংটনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন জন অ্যাডামস। এর পরই ক্ষমতায় বসেন টমাস জেফারসন। অর্থাৎ, জেফারসন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতায় ছিলেন পর পর দুই মেয়াদে। ১৮০১ সাল থেকে ১৮০৯ সাল পর্যন্ত। জেফারসনের বাবা ছিলেন ধনী ভূস্বামী। তাই উত্তরাধিকারসূত্রে বিপুল সম্পদের মালিক হন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। জেফারসনের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের কোটিপতি প্রেসিডেন্টদের একজন থিওডর রুজভেল্ট। নিউইয়র্কের অন্যতম খ্যাতিমান ও ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন রুজভেল্ট। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম প্রেসিডেন্ট। গত শতকের একদম শুরুতে অর্থাৎ ১৯০১ সাল থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। থিওডর রুজভেল্টের মোট সম্পদ ছিল ১৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের।
যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। ১৮২৯ সাল থেকে ১৮৩৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন জ্যাকসন। তিনিও সম্পদশালী কৃষিবিদ ছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর সম্পদের বড় অংশ এসেছিল দাসপ্রথা থেকে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটির বেশি।
টমাস জেফারসনের পর ১৮০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট জেমস মেডিসন। ক্ষমতায় ছিলেন ১৮১৭ সাল পর্যন্ত। তিনি সম্পদশালী কৃষক পরিবারের সন্তান। জেমস মেডিসনের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।
গত শতকের ষাটের দশকে স্নায়ুযুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লিন্ডন বি জনসন। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬তম এই প্রেসিডেন্ট ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে ছিলেন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার। ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রেসিডেন্ট জনসনের সম্পদের বড় অংশ এসেছিল স্ত্রী লেডি বার্ড জনসনের পরিবার থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে ওই পরিবার একটি টিভি এবং একটি রেডিও চ্যানেলের মালিক ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন হার্বার্ট হুভার। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে ছিলেন তিনি। বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমারে) রূপার খনির মালিক ছিলেন হুভার। সেই সঙ্গে হার্বার্ট হুভার পাঠ্যবইয়ে খনি প্রকৌশল বিষয়ে লেখা থেকেও স্বত্ব পেতেন। সব মিলিয়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
হালের জনপ্রিয় ও আলোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টদের একজন বিল ক্লিনটন। দেশটির ৪২তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন ক্লিনটন। পরপর দুই মেয়াদে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ১৬ লাখ।