ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েকে ধ্বংসস্তূপে খুঁজছেন বাবা

আকস্মিক বন্যার তোড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ক্যাম্প মিস্টিকে উদ্ধার অভিযান চলছে। ৫ জুলাই ২০২৫ছবি: রয়টার্স

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। ভিজছেন এক বাবা। হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ধ্বংসস্তূপ। যদি হারিয়ে যাওয়া আট বছরের ফুটফুটে মেয়েটির খোঁজ মেলে। জীবিত অথবা মৃত।

মৌসুমি বৃষ্টির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের গুয়াদালুপে নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে দুই কূল ছাপিয়ে স্যান অ্যান্টোনিও শহরে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। গত শুক্রবার যখন ওই বন্যা দেখা দেয়, সে সময়ে নদীর পাড়েই শিশুদের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প বসেছিল।

সেই ‘ক্যাপ মিস্টিকে’ মাইকেলের আট বছরের মেয়েটিও ছিল। ৪০ বছর বয়সী মাইকেল তাঁর পুরো নাম প্রকাশ করতে চান না। মেয়েটি এখনো নিখোঁজ।

মাইকেল টেক্সাসের রাজধানী অস্টিনে থাকেন। শুক্রবার সকালে অন্য অনেক অভিভাবকের মতো তিনিও এমন একটি বার্তা পান, যার থেকে আতঙ্কের আর কিছু কোনো মা–বাবার কাছে হতে পারে না। সে বার্তায় তাঁকে জানানো হয়, তাঁর সন্তান নিখোঁজ।
আরও পড়ুন

গতকাল শনিবার ওই ক্যাম্পের ধ্বংসস্তূপে মেয়েকে খুঁজছিলেন বাবা মাইকেল। পাথরের দেয়ালঘেরা জানালা ভাঙা একটি কেবিনের ধ্বংসস্তূপ দেখতে দেখতে তিনি বললেন, ‘আমার মেয়ে এখানেই ছিল।’ খুঁজতে খুঁজতে মেয়ের নাম লেখা একটি তোয়ালে, একটি ব্রেসলেট এবং একটি পারিবারিক ছবি পেলেন বাবা।

মাইকেল টেক্সাসের রাজধানী অস্টিনে থাকেন। শুক্রবার সকালে অন্য অনেক অভিভাবকের মতো তিনিও এমন একটি বার্তা পান, যার থেকে আতঙ্কের আর কিছু কোনো মা–বাবার কাছে হতে পারে না। সে বার্তায় তাঁকে জানানো হয়, তাঁর সন্তান নিখোঁজ।

আকস্মিক বন্যার পানির তোড়ে ক্যাম্প মিস্টিকের একটি কেবিনের ভেতরটা এমন লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ৫ জুলাই ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল, ফুঁসে উঠছিল নদী। শুক্রবার ভোর হওয়ার আগেই দুই কূল উপচানো পানির প্রবল স্রোতে নদীর পাড়ে থাকা ক্যাম্পটি ভেসে যায়। সেদিন ২৭টি মেয়েশিশু নিখোঁজ থাকার কথা জানানো হয়, যাদের একজন মাইকেলের মেয়ে।

ক্যাম্প মিস্টিকের ডাইনিং হল, বড় কাঠের কেবিনের একটি দেয়াল বন্যার পানির প্রবল চাপে পুরোপুরি ভেসে গেছে। মেঝেজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে সিরাপ আর সসের বোতল। টেক্সাসে প্রতিটি পরিবারের খাবার টেবিলে এগুলো অতি পরিচিত উপকরণ।

একটি হেলিকপ্টার তার কাছে গিয়ে তাকে সেই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা না পর্যন্ত সে (মেয়েটি) গাছ আঁকড়ে ধরে সেখানে টিকে ছিল।
গ্রেগ অ্যাবট, টেক্সাসের গভর্নর

আকস্মিক বন্যা আঘাত হানার সময় ক্যাম্পটিতে আনুমানিক ৭৫০ জন মেয়ে ছিল, যাদের অধিকাংশকেই নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলেছেন, সেদিন ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪টি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আরও অন্তত ২৭ কন্যাশিশু নিখোঁজ থাকার কথা জানানো হয়েছিল। পরে ৫০ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ, যাদের মধ্যে ১৫টি শিশু।

শুক্রবার ভোরে প্রবল বৃষ্টিতে মাত্র ৪৫ মিনিটে গুয়াদালুপে নদীর পানি প্রায় ২৬ ফুট (আট মিটার) পর্যন্ত বেড়ে যায়। শুক্রবার সেখানে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু ধ্বংসযজ্ঞ চোখে পড়ছিল।

আরও পড়ুন

বন্যার পানির তোড়ে গাছপালা ভেঙে গেছে, গাড়ি উল্টে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা পায়ে হেঁটে, ট্রাক চালিয়ে, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপের ভেতর কেউ বেঁচে আছে কি না, তার খোঁজ করেছেন।

আকস্মিক বন্যার পর টেক্সাসের গুয়াদালুপে নদীর পাড় ধরে উদ্ধার অভিযান চলছে। ৪ জুলাই ২০২৫
ছবি: এএফপি

একটি মেয়েকে একটি গাছের সঙ্গে আটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায় বলে শনিবার সাংবাদিকদের জানান টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। তিনি বলেন, একটি হেলিকপ্টার কাছে গিয়ে উদ্ধার না করা পর্যন্ত মেয়েটি গাছ আঁকড়ে ধরে সেখানে টিকেছিল।

বন্যায় পার্শ্ববর্তী কেন্ট কাউন্টিতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে, বেড়া ভেঙে গেছে এবং একটি জ্বালানি স্টেশন পানির নিচে ডুবে গেছে।

আরও পড়ুন
শুক্রবার ভোরে প্রবল বৃষ্টিতে মাত্র ৪৫ মিনিটে গুয়াদালুপে নদীর পানি প্রায় ২৬ ফুট (আট মিটার) পর্যন্ত বেড়ে গিয়ে নদীর আশপাশের এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। শুক্রবার সেখানে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু ধ্বংসযজ্ঞ চোখে পড়ছিল।

হতবিহ্বল মা–বাবারা নিখোঁজ সন্তানদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে তাঁরা তাদের জন্য ঈশ্বরের সাহায্য কামনা করেছিলেন।

শত বছরের মধ্যে এমন বন্যা একবারই দেখা যায়, বলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী জেরার্ড মার্টিনেজ। তিনি কাছেই একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করেন। বলেন, তিনি দেখেছেন কীভাবে পানি গাছের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং গাড়ি, আস্ত বাড়িগুলো নদীতে ভেসে যাচ্ছে।

এসব খবর যখন চারপাশে ঘুরছে তখন ক্যাম্প মিস্টিকে কাদামাটির মধ্যে মেয়েকে খুঁজে চলেছেন বাবা মাইকেল। এই বাবা বললেন, ‘আমি একেবারে অলৌকিক কিছু ঘটার আশায় আছি।’

আরও পড়ুন