এআই নিয়ে সতর্ক করেন গবেষকেরা, এরপরই চাকরি হারান স্যাম
আলোচিত চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদে স্যাম অল্টম্যানের থাকা না–থাকা নিয়ে কয়েক দিন বেশ নাটকীয়তার মধ্যে কেটেছে। গত শুক্রবার স্যামকে সিইওর পদ থেকে সরানোর কথা জানানোর আগে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন গবেষক পরিচালনা পর্ষদকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে তাঁরা সতর্ক করে লিখেছেন, উদ্ভাবিত শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানবজাতির জন্য হুমকি হতে পারে।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, স্যামকে পদচ্যুত করার আগে এটাই ওপেনএআইয়ে ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা। এর পরপরই স্যামের পদচ্যুতি নিয়ে নাটকের সূত্রপাত। এর মধ্যে পরিচালনা পর্ষদকে লেখা খোলাচিঠিতে সাত শতাধিক কর্মী জানান, স্যামকে সিইও পদে না ফেরালে তাঁরা সবাই একযোগে পদত্যাগ করবেন। এরপর গত মঙ্গলবার সিইও পদে স্যামকে ফেরানো হয়।
সূত্র জানিয়েছে, স্যামের বিরুদ্ধে ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের যেসব অভিযোগ ছিল, তার মধ্যে গবেষকদের লেখা ওই চিঠির সারবত্তা রয়েছে। তবে রয়টার্সের পক্ষ থেকে চিঠির বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আর চিঠিতে সই করা গবেষকেরা এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির অন্তর্বর্তীকালীন সিইওর দায়িত্ব পাওয়া মিরা মুরাতি প্রকল্পটির নাম ‘কিউ–স্টার’ (কিউ*) বলে কর্মীদের কাছে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গবেষকদের দেওয়া সতর্কবার্তা–সংবলিত ওই চিঠি স্যামকে নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি শুরুর আগেই পরিচালনা পর্ষদকে দেওয়া হয়েছিল।
পরে সংবাদমাধ্যমে চিঠির কথা জানাজানি হয়ে যায়। ওপেনএআইয়ের মুখপাত্র বলেন, চিঠির বিষয়টি সংবাদমাধ্যম জেনে গেছে, এটা মিরা মুরাতি কর্মীদের বলেছেন। তবে এসব প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে তিনি (মিরা) কোনো মন্তব্য করেননি।
পরিচালনা পর্ষদকে লেখা চিঠিতে গবেষকেরা দাবি করেছেন, এজিআই মানবজাতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে এটা কিভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু লেখা হয়নি। যদিও কম্পিউটারবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃত্রিম প্রযুক্তির বিকাশে সম্ভাব্য বিপদের কথা বলে আসছেন
চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানটি কিউ–স্টার প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অভ্যন্তরীণভাবে এটাকে ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম সাধারণ বৃদ্ধিমত্তা (এজিআই) বলা হয়। ওপেনএআইয়ের কর্মীদের মতে, এজিআই মানুষের চেয়েও বেশি স্মার্ট। সূত্র জানিয়েছে, এজিআই ব্যবস্থা গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম।
এজিআইয়ের সফলতা নিয়ে গবেষকদের দাবি রয়টার্সের পক্ষ থেকে স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
পরিচালনা পর্ষদকে লেখা চিঠিতে গবেষকেরা দাবি করেছেন, এজিআই মানবজাতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে এটি কিভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু লেখা হয়নি। যদিও কম্পিউটারবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃত্রিম প্রযুক্তির বিকাশে সম্ভাব্য বিপদের কথা বলে আসছেন।
বছরখানেক আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি চ্যাটজিপিটি বাজারে এনে সাড়া ফেলে দেন স্যাম। প্রযুক্তির জগতে ৩৮ বছর বয়সী স্যাম রীতিমতো তারকা বনে যান। দ্রুত বিকাশমান সফটওয়্যার এটি। জনপ্রিয়তার নিরিখে মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এতে বিনিয়োগ করেছে। স্যামের নেতৃত্বে এজিআইয়ের গবেষণাও এগিয়ে চলেছে।
গত সপ্তাহে সান ফ্রান্সিসকোয় বিশ্বনেতাদের এক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন স্যাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘এজিআই সবার মনোযোগে রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ এর পরপরই ওপেনএআইয়ে সিইওর চাকরি হারান স্যাম।
সিইও হিসেবে ফিরে এসে ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদকে বরখাস্ত করেছেন স্যাম। যেই পর্ষদের সদস্যরা গত শুক্রবার স্যামকে পদচ্যুত করেছিলেন, সপ্তাহ না পেরোতে পদ ফিরে পেয়ে তিনি তাঁদের সরিয়ে দিয়েছেন।