নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন: যুক্তরাষ্ট্রে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিল পাস

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে একটি প্রতীকী বিলে গতকাল মঙ্গলবার ভোট দিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা।

কয়েক মাস ধরে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান গত ২০ মে ইসরায়েল ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।

সেদিনই তাঁর এই পদক্ষেপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে করিম খান বলেন, গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ তাঁর কাছে রয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ। গতকাল এ–সংক্রান্ত একটি বিলে প্রতিনিধি পরিষদের প্রায় সব রিপাবলিকান সদস্য ভোট দেন। ডেমোক্র্যাটদের এক–পঞ্চমাংশ সদস্যও বিলের পক্ষে ভোট দেন।

ওই বিলে এই মামলার সঙ্গে জড়িত আইসিসি কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া, তাঁদের ভিসা বাতিল করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের সম্পদ হস্তান্তরে বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এক বিবৃতিতে বলেন, আজকের ভোট আইসিসির কর্মকর্তাদের বেআইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে একটি সীমারেখা টেনে দিল।

মাইক জনসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের পাশে আছে এবং মিথ্যা অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক কর্মকর্তাদের ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীনভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুমতি দেবে না।

এই বিলকে একটি ‘বার্তা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও খুব সম্ভবত ডেমোক্র্যাট–নিয়ন্ত্রিত সিনেটে বিলটি গ্রহণ করা হবে না। তবে যদি সেখানেও অনুমোদন পেয়ে যায়, তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাতে ভেটো দিতে পারেন। বাইডেন আগেই বলেছেন, তিনি দৃঢ়ভাবে ওই বিলের বিরোধিতা করেন।

করিম খান দুই ইসরায়েলি নেতা ছাড়াও হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ ও ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন।

প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের আবেদনে আইসিসির বিচারপতিরা কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবেন কি না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ১২৪ সদস্যরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল আইসিসির সদস্যদেশ নয়।

আরও পড়ুন

নেতানিয়াহু ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করার পর হোয়াইট হাউস থেকে আইসিসির সমালোচনা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ওই আবেদনকে ‘আপত্তিকর’ বলেছেন।

তবে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ‘সঠিক পন্থা নয়’।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার গতকাল ভোটের আগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশাসন হিসেবে আমাদের অবস্থান হচ্ছে, আমরা নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করি না। এই মুহূর্তে এটা সঠিক পন্থা বলেও আমাদের মনে হয় না।’

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তাঁকে ‘হতবাক ও হতাশ’ করেছে বলে গত রোববার এক সাক্ষাৎকারে বলেন নেতানিয়াহু।

গত শুক্রবার বাইডেন বলেন, গাজা যুদ্ধের চূড়ান্ত অবসানে ইসরায়েল নতুন একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে। তিন ধাপের ওই পরিকল্পনা শুরু হবে ছয় সপ্তাহের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে।

যদিও নেতানিয়াহু এখনো নিজেদের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে ১ হাজার ১৯৪ জন নিহত হন। বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় আরও প্রায় ২৫০ জনকে।

সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ৮ মাসের এই যুদ্ধে গাজায় অন্তত ৩৬ হাজার ৫৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

আরও পড়ুন