জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিয়ে জাতিসংঘে সোচ্চার ক্ষতিগ্রস্তরা

জাতিসংঘ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার দেওয়া ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির শিকার দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা উন্নত দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন।  

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর প্রেসিডেন্ট নিকেনিকে বুরাবারাভু বলেন, ‘সময় পেরিয়ে গেছে, এখনই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার উদ্দেশ্যে কয়লা, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে চুক্তি করেছিল বিশ্বের দেশগুলো। এরপরও অনেক দেশের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমেনি। এ চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভানুয়াতুর প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘মানবতার জন্য এই একটি উদ্যোগ বিশ্বকে রক্ষায় আমাদের এক ছাতার নিচে আনবে।’

আমাদের কী করা উচিত, সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু উদাসীনতা, অস্বীকার ও সাহসের অভাবে আমরা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছি না
– ফ্রাঙ্ক বেইনিমারামা, দ্বীপরাষ্ট্র ফিজির প্রধানমন্ত্রী।

সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রাক্কালে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) সতর্ক করে জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য অর্জিত হয়নি; বরং চলতি শতকের শেষে এটা ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হতে পারে। কার্বন নিঃসরণ ও উষ্ণায়ন বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যা, খরা, দাবানলের মতো প্রলয়ংকরী দুর্যোগের সংখ্যা ও ব্যাপ্তি বেড়েছে।

আরও পড়ুন

কয়েক মাস ধরে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গতকাল তাঁর ভাষণে উন্নত দেশগুলোর উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, ‘কেন আমার দেশের জনগণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল্য চোকাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে প্রলয়ংকরী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তানের মানুষ। আমাদের জীবন চিরতরে বদলে দিয়েছে এবারের বন্যা। অথচ এতে আমাদের দায় নেই।’

সময় পেরিয়ে গেছে, এখনই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে
– নিকেনিকে বুরাবারাভু, ভানুয়াতুর প্রেসিডেন্ট।

উন্নত দেশগুলোকে দায় স্বীকারের আহ্বান জানিয়ে শাহবাজ আরও বলেন, ‘জলবায়ু সংকটে অন্যায্য হচ্ছে। ধনী ও উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই নিজেদের দায় স্বীকার ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা, আমার দেশের ২২ কোটি মানুষ ঝুঁকির সর্বোচ্চ সীমায় রয়েছে। অথচ আমরা ১ শতাংশের কম কার্বন নিঃসরণ করে থাকি।’

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে যারা সবচেয়ে কম দায়ী, তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফিলিপাইন অল্প পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করে। অথচ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছি।’

আরও পড়ুন

জলবায়ুর ঝুঁকি প্রশমনকে ‘চলতি শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে মন্তব্য করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডেভিড কাবুয়া তাঁর ভাষণে বলেন, ‘জলবায়ু সুরক্ষায় আমি সব দেশকে একযোগে লড়াই শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে পারিনি। এ পরিস্থিতি আমাদের ধ্বংস ডেকে আনবে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে প্রলয়ংকরী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তানের মানুষ। আমাদের জীবন চিরতরে বদলে দিয়েছে এবারের বন্যা। অথচ এতে আমাদের দায় নেই
– শাহবাজ শরিফ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

দ্বীপরাষ্ট্র ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বেইনিমারামা বিশ্বের দেশগুলোর উদ্দেশে তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমাদের কী করা উচিত, সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু উদাসীনতা, অস্বীকার ও সাহসের অভাবে আমরা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছি না।’

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। সাধারণ পরিষদের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছিলেন, ‘আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতেই হবে।’

আরও পড়ুন

তবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর নেতাদের এক বৈঠকে বলেন, এটা ঠিক, যারা কম দায়ী, তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সময় তিনি ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর কর বাড়ান। সেই অর্থসহায়তা হিসেবে গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’ তা না হলে বিশ্বমানবতা চরম সংকটের মুখোমুখি হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

আরও পড়ুন