পদচ্যুত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ওপেনএআইয়ে ফিরছেন স্যাম

স্যাম অল্টম্যান
ফাইল ছবি: এএফপি

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ খোয়ানোর পর আবার ওপেনএআইয়ে ফিরছেন স্যাম অল্টম্যান। গত শুক্রবার তাঁকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ।

স্যাম অল্টম্যানকে ওপেনএআই থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর শুরু হয় নাটকীয়তা। মাঝে একবার জানা গেল, স্যামকে ওপেনএআইয়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পরে জানা গেল, মাইক্রোসফটে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি। এখন আবার তিনি ওপেনএআইয়ের নিজ পদে ফিরছেন।

এর আগে বিবিসির আরেক প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্যামকে ওপেনএআইয়ে ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র বিবিসিকে জানায়, পর্ষদের অন্তত একজন পরিচালক স্যামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আলোচনা করেছেন।

আরও পড়ুন

ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ সিইও স্যামকে চাকরিচ্যুত করার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্যামের সক্ষমতা নিয়ে আস্থার ঘাটতির কথা জানায়।

৩৮ বছর বয়সী স্যাম ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরিচালনা পর্ষদ তাঁকে বরখাস্ত করায় ওপেনএআইয়ের প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন গ্রেগ ব্রোকম্যান। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা।

ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে নতুন সিইও হিসেবে এমেট শেয়েরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মার্কিন টিভি সম্প্রচারমাধ্যম টুইসের সাবেক প্রধান এমেট।

এরপর গত সোমবার ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের উদ্দেশে একটি খোলাচিঠি লেখেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। চিঠিতে তাঁরা মোটাদাগে দুটি দাবি তুলেন। এক, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করতে হবে। দুই, চাকরি খোয়ানো সিইও স্যাম অল্টম্যান ও পদত্যাগ করা প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রোকম্যানকে ওপেনএআইয়ে ফেরাতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চিঠিতে জানান, এই দাবিগুলো মানা না হলে ওপেনএআইয়ের ৭০০ কর্মীর প্রায় সবাই পদত্যাগ করতে পিছপা হবেন না। প্রয়োজনে তাঁরা স্যাম অল্টম্যান ও গ্রেগ ব্রোকম্যানের সঙ্গে মাইক্রোসফটে যোগ দেবেন। উল্লেখ্য, ওপেনএআইয়ে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী এখন মাইক্রোসফট।

এই খোলাচিঠি নিয়ে সিলিকন ভ্যালিতে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন এতে নতুন মাত্রা যোগ করেন মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা। সোমবার এক বিবৃতিতে সত্য নাদেলা জানান, স্যাম অল্টম্যান ও গ্রেগ ব্রোকম্যান মাইক্রোসফটে যোগ দিচ্ছেন। তাঁরা মাইক্রোসফটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত (এআই) একটি আধুনিক গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেবেন।

এসবের মাঝে ওপেনএআইয়ে চলমান নাটকীয়তা আরও ঘনীভূত হয় বিনিয়োগকারীদের কর্মকাণ্ডে। জানা যায়, শুধু কর্মীরা নন, স্যামের চাকরি কেড়ে নেওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের ওপর বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরাও।

তাঁরা মনে করছেন, রদবদলের নাটকীয় পরিস্থিতিতে কোটি কোটি ডলার লোকসানের মুখোমুখি হতে পারেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কেউ কেউ আইনিব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছেন। আলোচনা করছেন আইনি পরামর্শকদের সঙ্গেও।

আরও পড়ুন

এসবের মাঝে নড়েচড়ে বসে ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ। উদ্যোগ নেওয়া হয় স্যাম ও গ্রেগকে ফিরিয়ে আনার। ব্লুমবার্গ ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের পদমর্যাদায় ফেরানো না গেলে পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে স্যামকে পেতে চাইছে ওপেনএআই।

অন্যদিকে সত্য নাদেলা বলেন, তিনি ওপেনএআই ও স্যামের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটা নির্ভর করে ওপেনএআইয়ের কর্মীরা সেখানে থাকবেন, নাকি মাইক্রোসফটে আসবেন, তার ওপর। তাই আমি দুটি বিকল্পই খোলা রেখেছি।’

স্যামকে চাকরিচ্যুত করার পর এখন ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে আছেন চারজন সদস্য। তাঁদের মধ্যে অ্যাডাম ডি’ অ্যাঞ্জেলো, তাসা শ্যাককুলে ও হেলেন তোনের সরাসরি ওপেনএআইয়ের কর্মকর্তা নন। আরেকজন হলেন ইলিয়া সুস্টকএভার। তিনি ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিজ্ঞানী।

স্যামের অপসারণ ও শীর্ষপদে রদবদল নিয়ে চরম নাটকীয়তার মধ্যে এক্সে একটি পোস্ট দেন ইলিয়া।

এতে তিনি এসবের জন্য ক্ষমা চান। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন চেয়ে পরিচালনা পর্ষদকে লেখা খোলা চিঠিতেও স্বাক্ষর করেন তিনি।

আরও পড়ুন