ট্রাম্পের নেতিবাচক খবর ধামাচাপা দিতে যেভাবে কাজ করত মার্কিন ট্যাবলয়েড

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে নিউইয়র্ক শহরের কিছু ট্যাবলয়েড পত্রিকার ‘গোপন কার্যকলাপের’ তৎপরতা গতকাল মঙ্গলবার ম্যানহাটানের একটি আদালতে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ওই আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলার বিচারের শুনানি চলছে।

গতকালের শুনানিতে জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ‘ন্যাশনাল ইনকুইরার’–এর সাবেক প্রকাশক ডেভিড পেকারকে প্রায় তিন ঘণ্টা জেরা করেন কৌঁসুলিরা।

সওয়াল–জবাবে ডেভিড জানান, ট্রাম্পের নামে নেতিবাচক খবর ধামাচাপা দিতে কাজ করেছিলেন তিনি। এ জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন ও তাঁর মধ্যে ‘গোপন পরিকল্পনা’ ছিল। এ পরিকল্পনাকে ‘বন্ধুদের মধ্যে চুক্তি’ বলেও মন্তব্য করেন ডেভিড।

আরও পড়ুন

আদালতকে ডেভিড জানান, এসব ঘটেছিল ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। ওই সময় তাঁরা তিনজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের নামে ‘নেতিবাচক খবর’ ধামাচাপা দিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন।

ডেভিড আরও বলেন, ওই সময় বেশ কয়েকটি নেতিবাচক নিবন্ধ ‘বাজার থেকে হাপিস করে দিতে’ ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ডেভিড বলেন, ‘বেশ বড় নিবন্ধ ছিল। আমি বিশ্বাস করতাম, বাজার থেকে তা সরিয়ে নেওয়া দরকার।’

কৌঁসুলিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও যৌন কেলেঙ্কারির খবর গণমাধ্যমে যাতে না আসে, সে জন্য অর্থ দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, এসবের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। এখন শুনানিতে অংশ নিয়ে ডেভিডের দেওয়া সাক্ষ্য সমালোচনার জন্ম দিতে পারে।

আরও পড়ুন

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যৌন সম্পর্কের কথা গোপন রাখতে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। আবার এই অর্থের বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্প তাঁর ব্যবসায়িক রেকর্ডেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এ নিয়ে চলছে মামলা। যদিও ট্রাম্প অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শুনানিতে ডেভিড বলেন, গত শতকের আশির দশকের শেষের দিকে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে তিনি ট্রাম্পের বেশ ভালো একজন বন্ধু হন।

ডেভিড বলেন, তাঁদের বন্ধুত্ব থেকে ‘দুজনই লাভবান’ হতেন। ট্রাম্প তাঁকে বিশেষ কিছু তথ্য জানাতেন। বিশেষ করে নিজের রিয়েলিটি শোর প্রতিযোগীদের নিয়ে। এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করত ন্যাশনাল ইনকুইরার। এতে তাঁর ট্যাবলয়েডের কাটতি এবং ট্রাম্পের শোর দর্শক—দুটোই বাড়ত।

প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়ার পর ২০১৫ সালের আগস্টে ট্রাম্প ও কোহেনের সঙ্গে দেখা করেন ডেভিড। আদালতে ডেভিড বলেন, সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্পের নেতিবাচক খবর ধামাচাপা দেওয়া এবং তাঁর সুনাম বাড়ে—এমন খবর বেশি বেশি প্রচারের বিষয়ে তখন সম্মত হন তিনি। শিগগিরই এ কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

যৌনজীবন নিয়ে রসাল সংবাদগুলো ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলেও তখন ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন ডেভিড। আদালতে তিনি বলেন, ট্রাম্প ছিলেন একজন ‘কাঙ্ক্ষিত অবিবাহিত ব্যক্তি’ যিনি ‘সবচেয়ে সুন্দরী নারীর’ সঙ্গে সময় কাটাতেন।

আদালতকে ডেভিড আরও বলেন, অন্তত দুটি ‘নেতিবাচক খবর’ ধামাচাপা দিতে তিনি, ট্রাম্প ও কোহেন একসঙ্গে কাজ করেছিলেন।

ফৌজদারি মামলায় গত ১৫ এপ্রিল ট্রাম্পের বিচার শুরু হয়েছে নিউইয়র্কের আদালতে। সেদিন আদালতে হাজিরও হন ট্রাম্প। তিনিই প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে জরিমানা দিয়ে তিনি কারাবাস থেকে রেহাই পেতে পারবেন।

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ট্রাম্প। তাই এ মামলাকে ‘রাজনৈতিক’ বলে মন্তব্য করে আসছেন তিনি।

আরও পড়ুন