যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে ছিল প্রায় ১২০টি ঘোড়ার একটি অশ্বারোহী দলছবি: রয়টার্স

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে স্বৈরশাসনের (রাশিয়ার পুতিন সরকার) বিরুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল বুধবার উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

এদিকে রাজার এ বক্তব্যের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এ ভোজসভায় রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

আরও পড়ুন

রাজা চার্লস বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মূল্যবোধ রক্ষার জন্য আমাদের জনগণ একসঙ্গে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে।’

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদে পৌঁছালে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়
ছবি: রয়টার্স

রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ট্রাম্পের এ সফর রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। হবে সংবাদ সম্মেলনও। ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন।

আরও পড়ুন

গতকালের রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের সুনসান-গোছানো প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া সোনালি নকশা করা রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘দীপ্তিময়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

কুচকাওয়াজ চলার সময় রাজা মজা করে প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করেন, যেন সৈন্যদের হাতে থাকা তলোয়ারে তাঁর আঘাত না লাগে।

রাজকীয় গির্জা ‘সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল’ ঘুরে দেখতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘কী অপূর্ব জায়গা, কী অপূর্ব জায়গা।’ পরে রাজকীয় সংগ্রহশালায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত ঐতিহাসিক নথি দেখেন তিনি। সেগুলো দেখে তিনি মন্তব্য করেন, ‘এটাই আসল।’

ট্রাম্প বহু বছর ধরেই প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একজন প্রশংসাকারী। সফরে ট্রাম্প উইন্ডসরে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সময় গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিশেষ হেলিকপ্টার ‘মেরিন ওয়ান’ উইন্ডসর ক্যাসলে অবতরণ করে। এ সময় সেখানে ছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লসের উত্তরসূরি প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন। তাঁরা ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়াকে স্বাগত জানান।

রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলার সঙ্গে ট্রাম্প দম্পতি। গতকাল বুধবার উইন্ডসর ক্যাসলে
ছবি: এএফপি

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
গত মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প লন্ডনে পৌঁছান। তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তাঁকে স্বাগত জানান লন্ডনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়ারেন স্টিফেনস। সেই রাতে রাষ্ট্রদূতের বাসভবন উইনফিল্ড হাউসে ছিলেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘দীপ্তিময়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের এবারের সফরকে বলা হচ্ছে নজিরবিহীন। কারণ, এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন তিনি। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুবার রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে যাননি। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে সস্ত্রীক যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নানা আন্তর্জাতিক সংকট চলছে এখন। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রাখার চেষ্টায় জাঁকজমক আয়োজনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে মুগ্ধ করতে চাচ্ছে লন্ডন। ট্রাম্প ব্রিটিশ রাজপরিবার ও জমকালো আয়োজন পছন্দ করেন। তাই ২০১৯ সালের চেয়েও এবার বড় আয়োজন করা হয়েছে।

তবে রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পকে নিয়ে কিছুটা বিপাকেও লন্ডন। কারণ, বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প যুক্তরাজ্যে অজনপ্রিয়। এ জন্য লন্ডন পুলিশ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। রাজপ্রাসাদের আশপাশে ১ হাজার ৬০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।