ট্রাম্প মিত্র চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কী জানা গেল

ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত দর্শকদের দিকে টুপি ছুড়ে দিচ্ছেন চার্লি কার্ক। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষক চার্লি কার্ককে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউটাহ অঙ্গরাজ্যে একটি অনুষ্ঠানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন পর্যন্ত যা যা জানা গেছে, তা দেখে নেওয়া যাক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যা হচ্ছিল

চার্লি কার্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রক্ষণশীল যুব আন্দোলনের প্রধান। ২০১২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি এ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে তিনি ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।

চার্লির পরনে ছিল সাদা রঙের টি-শার্ট। সেটির সামনের দিকে বুকের অংশে কালো রঙে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল ‘ফ্রিডম’। তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করার সময় তিনি একটি তাঁবুর নিচে চেয়ারে বসে উপস্থিত দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন।

ইউটাহতে গতকাল ছিল চার্লির প্রথম সমাবেশ। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আমেরিকা কামব্যাক ট্যুর’ নামে এ রকম আরও প্রায় ১৫টি সমাবেশ আয়োজনের কথা ছিল, যেগুলো চলতি এবং আগামী মাসজুড়ে (অক্টোবর) চলার কথা রয়েছে।

চার্লি প্রায়ই এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এসব অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন। অনুষ্ঠানে নানা বিষয় নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় ও বিতর্ক করেন।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখছিলেন চার্লি কার্ক। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

একটি গুলি এবং চিৎকার

বুধবার ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ইউটাহর কংগ্রেস সদস্য জেসন চ্যাফেৎজ। তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, কার্ক তখন ‘ট্রান্সজেন্ডার শুটার, ম্যাসশুটার’—এসব নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই গুলির শব্দ শোনা যায়।

কাছেই একটি জায়গা থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ৩১ বছর বয়সী কার্ক হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, তাঁর ঘাড় থেকে রক্ত ছিটকে বের হচ্ছিল।

কার্ককে তাঁর নিরাপত্তা দল দ্রুত স্ট্রেচারে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

চ্যাফেৎজ বলেন, ‘গুলির শব্দ শোনার একটু পরই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেখানে থাকা সবাই মঞ্চের ওপর শুয়ে পড়েন...অনেকে চিৎকার করতে শুরু করেন, তারপর সবাই দৌড়াতে থাকেন।’

সন্দেহভাজন হত্যাকারীর খোঁজ চলছে

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের ভেতর থেকেই গুলি করা হয়েছে, সম্ভবত ছাদ থেকে। হামলাকারী গাঢ় রঙের পোশাক পরে ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরুতে বলেছিল, হামলাকারী পালিয়ে গেছেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল বলেন, এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পরে এফবিআই পরিচালক জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ, এখনো হামলাকারীর খোঁজ চলছে।

ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার্লি কার্ক বক্তব্য রাখার সময় গুলির শব্দ হলে প্রাণ বাঁচাতে দর্শকেরা ছুটতে শুরু করেন। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

কার্কের মৃত্যুর খবর জানান ট্রাম্প

গুলিতে কার্ক নিহত হওয়ার খবর জানিয়ে ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘মহান এবং এমনকি কিংবদন্তি, চার্লি কার্ক মারা গেছেন।’

ডেমোক্রেটিক দলের নেতারাও কার্ককে গুলি করে হত্যার এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। নিন্দা জানানো ডেমোক্রেটিক নেতাদের মধ্যে কমলা হ্যারিসও আছেন। কমলা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।’

আরও পড়ুন

কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

এখনো কোনো সন্দেহভাজন শনাক্ত হয়নি। ট্রাম্প ‘কট্টর বামপন্থীদের’ বক্তব্যকে কার্কের হত্যার সঙ্গে যুক্ত করেছেন এবং কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ওভাল অফিস থেকে এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের দেশে যে সন্ত্রাস দেখছি, তার জন্য এ ধরনের বক্তব্য সরাসরি দায়ী।’

চার মিনিটের ওই ভিডিওতে পুরোটা সময় ট্রাম্প খুবই গম্ভীর ছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমার প্রশাসন এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে, পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে খুঁজে বের করবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন ও সমর্থন করে তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।’

আরও পড়ুন