বেলুনকাণ্ডে মার্কিন কালোতালিকায় ৬ চীনা কোম্পানি

আটলান্টিক মহাসাগর থেকে চীনের গোয়েন্দা বেলুনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করছে যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: মার্কিন নৌবাহিনী

বেলুনকাণ্ডের জেরে ছয়টি চীনা কোম্পানিকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। গতকাল শুক্রবার মার্কিন প্রশাসন জানায়, এসব কোম্পানি চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে সম্পৃক্ত। বিশেষত চীনের আকাশযান ও গোয়েন্দা বেলুন প্রকল্পের সঙ্গে এসব কোম্পানির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, শুধু তাদের আকাশসীমায় নয়, বরং লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের ৪০টি দেশের ওপর দিয়ে উড়েছে চীনা গোয়েন্দা বেলুন।

সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা তথ্য। এই ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্বানুমতি ছাড়া মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার ও মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। এ বিষয়ে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের এক বিবৃতিতে গতকাল বলা হয়েছে, চীনা গোয়েন্দা বেলুনটি আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই কারণে ছয়টি চীনা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে গোয়েন্দা বেলুনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। চীনের এ বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়ছে। এটি প্রায় ২০০ ফুট (৬০ মিটার) লম্বা ছিল। অনেক ওপর দিয়ে উড়ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেন্টাগনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বেলুনটি গুলি করে ভূপাতিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে বেলুনটি যেসব এলাকার ওপর দিয়ে উড়ছিল, সেখানে বসবাসরত মানুষের ক্ষতি বিবেচনায় তখন তা করা হয়নি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

পরে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ওই ধ্বংসাবশেষ তারা চীনকে ফেরত দেবে না।

এ ঘটনায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাঁর চীন সফর স্থগিত করেন। ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অনুপ্রবেশ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী কাজ।

‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে দুঃখ প্রকাশ করে চীন। দেশটির দাবি, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো এ বেলুন বাতাসে ভেসে পথ ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে সেটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি উড়ে যাওয়ার এ ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

তবে বেলুনটি ধ্বংস করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ধ্বংস করা চীনা বেলুনটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম। এটি একটি নৌবহরের অংশ। বেলুনটি পাঁচটি মহাদেশজুড়ে ৪০টির বেশি দেশের ওপর দিয়ে উড়ে এসেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে চীন। জো বাইডেন প্রশাসন সরাসরি ওই দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এ বিষয় নিয়ে।

আরও পড়ুন