কুখ্যাত নারী পাচারকারী এপস্টেইনের নতুন নথিতে এবার ইলন মাস্কের নাম
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইনের নতুন নথিতে এবার বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের নাম এসেছে। সেই সঙ্গে নতুন করে আবারও এসেছে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম। কংগ্রেসের একটি কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা ওই নথি প্রকাশ করেছেন।
কুখ্যাত নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইন এস্টেট থেকে কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটির কাছে নতুন করে যে নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এপস্টেইন তাঁর দ্বীপে যেতে ইলন মাস্ককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
আলাদা আরেকটি নথিতে দেখা গেছে, ২০০০ সালের মে মাসে নিউজার্সি থেকে ফ্লোরিডাগামী একটি ফ্লাইটে যাত্রীদের যে তালিকা, সেটিতে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম আছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসি থেকে ইলন মাস্ক ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
ইলন মাস্ক বলেছেন, এপস্টেইন তাঁকে দ্বীপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এপস্টেইন মামলায় এর আগেও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম এসেছে। তখন তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই।
আর ইলন মাস্ক বলেছেন, এপস্টেইন তাঁকে দ্বীপে যেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে তিনি সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
জেফরি এপস্টেইন এস্টেট থেকে আংশিক এই নথিগুলো মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় এমন নথি পাঠানো হলো।
হাউস ওভারসাইট কমিটিতে থাকা ডেমোক্র্যাটরা বলেছেন, এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফোনে বার্তালাপের তালিকা, ফ্লাইটের তালিকা ও সেগুলোতে থাকা যাত্রীদের তালিকা, আর্থিক হিসাবের খতিয়ান ও এপস্টেইনের দৈনিক সূচি।
ইলন মাস্ক ও প্রিন্স অ্যান্ড্রু ছাড়াও তৃতীয় দফায় প্রকাশ করা নথিগুলোতে আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন মানুষ ও ধনী ব্যক্তি জেফরি এপস্টেইনের বন্ধু ছিলেন। প্রতিটি নতুন নথি নতুন তথ্য প্রকাশ করছে। তাই আরও নথি প্রকাশ করা উচিত, যেহেতু আমরা বেঁচে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে কাজ করছি।
নতুন করে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে অনলাইনভিত্তিক জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী পিটার থিয়েল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন আছেন।
যেসব নথি প্রকাশ করা হয়েছে, তার একটি ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বরের। ওই নথির এক লাইনে লেখা ছিল—‘স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, ইলন মাস্ক ৬ ডিসেম্বর দ্বীপে আসবেন (এটা ঠিক আছে তো?)’
ফ্লাইটের যাত্রীদের একটি তালিকায় দেখা গেছে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ২০০০ সালের ১২ মে নিউ জার্সি থেকে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে গেছেন। ওই ফ্লাইটের যাত্রী তালিকায় এপস্টেইন ও তাঁর সহযোগী ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের নামও আছে।
এপস্টেইনের সঙ্গে মিলে যৌনদাসী হিসেবে মেয়েশিশুদের পাচারের অভিযোগে ২০২১ সালে ম্যাক্সওয়েলও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ওই যাত্রার বিষয়ে বাকিংহাম প্যালেসের ওয়েবসাইটে যে তথ্য আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০০০ সালের ১১ মে প্রিন্স অ্যান্ড্রু নিউইয়র্কে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। ১৫ মে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন।
এপস্টেইনের নথিতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে সম্ভাব্য সকালের এক নাশতার পার্টির পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ আছে। ২০২২ সালে গেটস বিবিসিকে বলেছিলেন, জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে দেখা করাটা তাঁর ‘ভুল’ ছিল।
তবে নথিতে যাঁদের নাম আছে, তাঁরা এপস্টেইনের অপরাধ সম্পর্কে অবগত ছিলেন, এমনটা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কমিটিতে ডেমোক্র্যাটদের মুখপাত্র সারা গুয়েরেরো অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও নথি প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সারা গুয়েরেরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন মানুষ ও ধনী ব্যক্তি জেফরি এপস্টেইনের বন্ধু ছিলেন। প্রতিটি নতুন নথি নতুন তথ্য প্রকাশ করছে। তাই আরও নথি প্রকাশ করা উচিত। আমরা বেঁচে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে কাজ করছি, ফলে এটি আমাদের দায়িত্বও।’
কমিটিতে থাকা রিপাবলিকানদের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা এ মামলায় ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চেয়ে রাজনীতিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন’। তাঁরা এটাও বলেছে, তাঁরা শিগগিরই পুরো নথি প্রকাশ করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইন। শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে ছিলেন মার্কিন এই ধনকুবের। নানা অভিযোগের বিচার চলাকালে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।