‘অসাধারণ অভিজ্ঞতা’ নিয়ে মহাকাশ থেকে ফিরলেন বেজোস

মহাকাশযাত্রা শেষে ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসছেন জেফ বেজোস ও তাঁর সঙ্গীরা। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে, ২০ জুলাই।
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেফ বেজোস। শুধু তাই নয়, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি। স্বপ্ন দেখতে ও তা পূরণে অর্থ ঢালতে কার্পণ্য করেন না ধনীরা। বেজোসও ব্যতিক্রম নন। স্বপ্ন ছিল হয়েছে মহাকাশে যাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে নিজের কোম্পানি গড়েছেন। সেই কোম্পানি বানিয়েছে রকেট। নিজের কোম্পানির বানানো রকেটে চড়ে আজ মঙ্গলবার ঘুরে এলেন মহাকাশে। ফিরে এসে বেজোস বললেন, এটা খুবই আনন্দদায়ক একটি অভিজ্ঞতা। এটা জীবনের সেরা দিন।

ব্লু অরিজিনের যাত্রা

মহাকাশ নিয়ে বেজোস স্বপ্ন দেখেছিলেন বেশ আগেই। বুঝতে পেরেছিলেন, ভবিষ্যৎ বিশ্বে মহাকাশ ব্যবসাটা বেশ জমে উঠবে। সময়টা ২০০০ সাল। স্বপ্ন পূরণে ব্যবসায়ী বেজোস গড়ে তুললেন মহাকাশ সংক্রান্ত কোম্পানি ব্লু অরিজিন। শুরু থেকেই মহাকাশ যাত্রাকে তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল করতে উদ্যোগী হয় কোম্পানিটি। মহাকাশ পর্যটনকে জনপ্রিয় করতে ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন বেজোস।

২০১৯ সালে বেজোস জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে চাঁদে নতুন করে মানুষ পাঠাবে ব্লু অরিজিন। একই সঙ্গে তিনি নিজেও মহাকাশে ভ্রমণ করবেন বলে জানান। সেই থেকে চলছিল প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে ব্লু অরিজিন মহাকাশে মানুষ নিতে বানিয়ে ফেলেছে বিশেষ রকেট নিউ শেপার্ড। এই রকেটে চড়েই আজ মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ করেছেন বেজোস।

স্বপ্ন পূরণের ১০ মিনিট

বেজোসের স্বপ্ন পূরণের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ছিল আজ। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম টেক্সাসের ভ্যান হর্নের নিজস্ব উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে বেজোস ও তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে নিউ শেপার্ড রকেট মহাকাশের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে।

মহাকাশ যাত্রায় বেজোসের সঙ্গী হয়েছেন আরও তিনজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছোট ভাই মার্ক বেজোস। রয়েছেন বিশ্বের প্রথম দিককার বিমানচালক ৮২ বছরের ম্যারি ওয়ালেচ (ওয়্যালি ফাঙ্ক নামে সমধিক পরিচিত) এবং নেদারল্যান্ডসের একটি প্রাইভেট ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সিইওর ১৮ বছরের ছেলে ওলিভার ড্যামেন।

উৎক্ষেপণের পর প্রায় ৭৬ কিলোমিটার গিয়ে তাঁদের বহনকারী ক্যাপসুলটি রকেট থেকে আলাদা হয়। পরে উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ২ মাইল দূরে রকেটটি নিরাপদে নেমে আসে। আর ক্যাপসুলটি বেজোস ও তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশের সীমানা টানা কারমান লাইন অতিক্রম করে। ১০৬ কিলোমিটার বা ৩ লাখ ৫০ হাজার ফুট ওপরে উড়ে যায় সেটি। এরপর ১০ মিনিটের মহাকাশযাত্রা শেষে আরোহীদের নিয়ে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

সঙ্গী ছিলেন তিনজন

মহাকাশ যাত্রায় বেজোসের সঙ্গী হয়েছেন আরও তিনজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছোট ভাই মার্ক বেজোস। ৫৩ বছর বয়সী মার্ক নিউইয়র্কভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান রবিন হুডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।

এই যাত্রায় বেজোসের সঙ্গী হয়েছেন বিশ্বের প্রথম দিককার বিমানচালক ৮২ বছরের ম্যারি ওয়ালেচ (ওয়্যালি ফাঙ্ক নামে সমধিক পরিচিত) এবং নেদারল্যান্ডসের একটি প্রাইভেট ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সিইও জোয়েস ড্যামেনের ১৮ বছরের ছেলে ওলিভার ড্যামেন।

আরও পড়ুন

তাঁরা বড় জানালাওয়ালা ক্যাপসুলে চড়ে মহাকাশে ভ্রমণ করেছেন। সেখান থেকে পৃথিবীর অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেছেন।

আমি সারা জীবন মহাকাশে এভাবে উড়তে চেয়েছি। এটি একটি দুঃসাহসিক কাজ এবং আমার জন্য অনেক বড় কিছু।
- আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেফ বেজোস

শুধু কি তাই, সবচেয়ে কম বয়সে মহাকাশে ভ্রমণের রেকর্ড এখন ওলিভারের দখলে। একইসঙ্গে বেজোসের সঙ্গী হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে ঘুরে আসা সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির রেকর্ড গড়েছেন ৮২ বছরের ম্যারি ওয়ালেচ।

কপাল খুলেছে ওলিভারের

১৮ বছরের ওলিভার ড্যামেনের কপাল বেশ ভালো বলতে হয়। তিনি ব্লু অরিজিনের রকেট নিউ শেপার্ডের দ্বিতীয় যাত্রার জন্য বুকিং দিয়েছিলেন। আর প্রথম যাত্রায় যাওয়ার কথা ছিল আরেকজনের। তাঁর পরিচয় প্রকাশ করেনি বেজোসের কোম্পানি। প্রথম যাত্রায় সামিল হতে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি বেজোসের কোম্পানিকে ২৮ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন। তবে বেজোসের মহাকাশ অভিযানের সময়ের সঙ্গে সময় মিলাতে না পারায় তাঁর প্রথম যাত্রায় সামিল হওয়া হয়নি। তাঁর জায়গায় মহাকাশে ভ্রমণ করে এসেছেন ওলিভার।

আরও পড়ুন

উচ্ছ্বসিত বেজোস

মহাকাশে অভিযান শুরুর আগে সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেজোস বলেন, ‘আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত। সবাই জানতে চাচ্ছেন, আমি ভয় পাচ্ছি কি না। আমি ভীত নই, বরং আমি কৌতূহলী। এই অভিযান থেকে আমরা কী শিখতে যাচ্ছি, আমি সেটা জানতে চাই।’

এর আগে এই অভিযান সম্পর্কে বেজোস ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিও বার্তা দেন। ওই বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি সারা জীবন মহাকাশে এভাবে উড়তে চেয়েছি। এটি একটি দুঃসাহসিক কাজ এবং আমার জন্য অনেক বড় কিছু।’

আর ফিরে আসার পরে সংবাদ সম্মেলনে বেজোসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেমন বোধ করলেন? জবাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ওহ্‌ ঈশ্বর, এটা খুবই আনন্দদায়ক একটি অভিজ্ঞতা। মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখতে বেশ ঠুনকো লাগে।’

সমালোচনা

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি চলছে। দেশে দেশে মৃত্যুর মিছিল নেমেছে। প্রয়োজনীয় টিকার জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে অনেক দেশে। এমন পরিস্থিতিতে মহামারি নিয়ন্ত্রণে অর্থ ব্যয় না করে মহাকাশ অভিযানের স্বপ্ন পূরণে বিলিয়ন ডলার খরচ করায় সমালোচনা হয়েছে বেজোসের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে সমালোচনা করে বলেছেন, এই খাতে খরচ না করে মহামারির লাগাম টানা, বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় তদারকি কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন রোধের কার্যক্রমে সেই অর্থ ব্যয় করলে বরং বেজোস ভালো করতেন।

নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের তৈরি নিউ শেপার্ড নামের একটি রকেটে চড়ে মহাকাশে উড়েছেন জেফ বেজোস ও তাঁর সঙ্গীরা। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে, ২০ জুলাই।
ছবি: রয়টার্স

রিচার্ড ব্র্যানসনের জবাব

এসব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের লেখক, বহুজাতিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের ৫৭৯তম ধনী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন। তিনি বলেন, আমি এটা বুঝতে পারছি। তবে আমার মনে হয় তাঁরা (সমালোচনাকারীরা) পৃথিবীর জন্য মহাকাশ কী করে, সেই সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখেন না।

এই বিষয়ে ব্র্যানসনের মুখ খোলার একটা কারণ রয়েছে। গত ১০ জুলাই তিনি নিজেও মহাকাশ অভিযানে গিয়েছিলেন। রিচার্ড ব্র্যানসন বিশ্বে প্রথমবারের মতো নিজস্ব মহাশূন্যযান ভার্জিন গ্যালাকটিক প্লেনে চড়ে মহাকাশে যান। এখন সফলভাবে মহাকাশযাত্রা শেষ করায় ব্র্যানসন বেজোস ও তাঁর সঙ্গীদের টুইট করে অভিবাদন জানিয়েছেন।

বিবিসি, সিএনএন ও সিএনবিসি অবলম্বনে