অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য হুমকি

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
ফাইল ছবি

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিতে যে তৎপরতা চালানো হচ্ছিল, তা থামিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ আদালত। আদালতের এমন আদেশ স্বস্তি দিয়েছে অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর বাগ্‌দত্তা স্টেলা মরিসকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশুভ হুমকি।

বার্তা সংস্থা এএফপির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরাক ও আফগান যুদ্ধের সামরিক নথি প্রকাশ করেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১০ সালে এসব নথি প্রকাশ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিসহ ১৮টি অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। এসব মামলার বিচারের জন্য অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে গত সোমবার একটি শুনানি হয় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ওল্ড বেইলি কোর্টে। এ সময় ডিস্ট্রিক্ট জজ ভ্যানেসা ব্যারাইটসার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, তা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে তাঁর আত্মহত্যার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ওই আদেশে বিচারক বলেন, তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া উচিত হবে না।

এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সম্ভাবনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের। এ ছাড়া বিচার বিভাগ যেভাবে অ্যাসাঞ্জের কর্মকাণ্ডকে দেখছে, তা জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ইস্যু নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য হুমকির। কারণ, এসব ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ নথি প্রকাশ জরুরি। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রিপোর্টার্স কমিটি অব ফ্রিডম অব দ্য প্রেসের নির্বাহী পরিচালক ব্রুস ব্রাউন বলেন, অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরজির সঙ্গে ব্রিটিশ বিচারকের মতের যে মিল, তা ‘গভীর উদ্বেগের’। এমনকি তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে না দিলেও এই মতৈক্য উদ্বেগের। তিনি বলেন, এই মামলার ক্ষেত্রে সরকারের যে আইনি তত্ত্ব, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল বিষয়গুলোর জন্যও হুমকির।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির নাইট ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক জামিল জাফর। তিনি বলেন, ব্রিটিশ কোর্ট অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তরের আহ্বান নাকচ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মামলাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই আদেশ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর একটি অশুভ ছায়া হয়ে থাকবে।

২০১০ সালে উইকিলিকস যখন ওই সব তথ্য ফাঁস করে দেয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ধাক্কা খায়। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ উন্মোচিত হয়।

এরপর অ্যাসাঞ্জকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনায় নেয় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। কিন্তু ওবামা প্রশাসন বিষয়টি এভাবে দেখেছিল যে অ্যাসাঞ্জকে বিচারের আওতায় আনার অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিধর সংবাদমাধ্যমগুলোকেও বিচারের আওতায় আনা, যারা এমন ধরনের নথি প্রকাশ করে থাকে। ফলে, আর এগোয়নি বিষয়টি।

কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই অবস্থান থেকে সরে আসে।

পরে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর অবিশ্বাস্য আঘাত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জামিল জাফর।