ট্রাম্পের আমলে অ্যাসাঞ্জকে হত্যা করতে চেয়েছিল সিআইএ
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে অপহরণ ও হত্যা করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ২০১৭ সালে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন গোয়েন্দা সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। সিআইএর হ্যাকিং-সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ করায় তাঁকে হত্যার কথা ভেবেছিল সংস্থাটি।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৭ সালে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে তাঁর স্বেচ্ছায় বন্দী জীবনের পাঁচ বছরে প্রবেশ করেন। ওই সময় ‘ভল্ট ৭’ নামে সিআইএ-সংক্রান্ত নথি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে শুরু করে উইকিলিকস। সিআইএর ইতিহাসে এর আগে একসঙ্গে এত নথি ফাঁস হয়নি।
অ্যাসাঞ্জের এমন কর্মকাণ্ডে ভীষণ উদ্বিগ্ন ও বিব্রত ছিলেন সিআইএর তখনকার পরিচালক মাইক পম্পেও এবং সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। পরবর্তী সময়ে পম্পেওকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন ট্রাম্প। সিআইএর প্রধান থাকার সময় পম্পেও এবং সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা লন্ডনে অবস্থানরত অ্যাসাঞ্জকে অপহরণ ও প্রয়োজনে হত্যা করার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইয়াহু নিউজ।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘তাঁরা (সিআইএর কর্মকর্তারা) রক্তপাত দেখতে চেয়েছিল।’ ট্রাম্প প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা প্রণয়ন করেছিলেন। সব ধরনের বিকল্প নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী একজন সাবেক কর্মকর্তা। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি সিআইএ।
গোপন নথি ফাঁসের শাস্তি হিসেবে একজন বেসামরিক ব্যক্তিকে অপহরণ ও হত্যা করা কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন উদ্যোগ সমালোচিত হতো। এরপরও পম্পেওর নেতৃত্বাধীন সিআইএ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আগ্রাসী উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভেবেছিল। তবে কী কারণে ওই সময় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়নি, সেটা জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী ব্যারি পোলাক সিআইএর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে ইয়াহু নিউজকে তিনি বলেন, ‘সত্য ও সঠিক নথি প্রকাশের অভিযোগে বিচারিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে মার্কিন সরকার একজন বেসামরিক মানুষকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এটা আমার জন্য অপমানজনক।’
২০১০ সালে আড়াই লাখ মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ও পাঁচ লাখ সামরিক গোপন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দিয়েছিল উইকিলিকস। এর কিছুদিন পর সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ওই মামলায় বিচারের জন্য যুক্তরাজ্য সরকার তাঁকে সুইডেনের কাছে হস্তান্তর করতে চেয়েছিল।
সুইডেন কিংবা মার্কিন প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর এড়াতে ২০১২ সালে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১৮ সালে তাঁকে নাগরিকত্ব দেয় ইকুয়েডর। দীর্ঘ সাত বছর আশ্রিত থাকার পর ২০১৯ সালে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। এখন তিনি লন্ডনের কারাগারে অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর এড়াতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।