মাস্ক ও ট্রাম্পের অম্লমধুর সম্পর্কের রহস্য কী

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টুইটারের নতুন মালিক ইলন মাস্ক
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটারপ্রীতির কথা কমবেশি সবাই জানেন। ক্ষমতায় থাকার শুরুর দিকে প্রতিদিন একের পর এক টুইট করে আলোচনায় থাকতে পছন্দ করতেন ট্রাম্প। তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। বিতর্কের মুখে একসময় ট্রাম্পকে টুইটারে নিষিদ্ধ করা হয়।

এরপর সময় গড়িয়েছে, টুইটারের মালিকানাও বদলেছে। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নিয়েছেন। সম্প্রতি ফিরিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্পের নিষিদ্ধ হওয়া টুইটার অ্যাকাউন্ট। তবে ট্রাম্পও কম নন, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এখন আর টুইটারে ফেরার আগ্রহ নেই তাঁর।

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এরপর অনেকেই ভেবেছিলেন, ট্রাম্প টুইটারে ফিরবেন। ভোটের আগে তাঁর মতো তুখোড় একজন রাজনীতিক কোটি কোটি ফলোয়ারের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করবেন না। কিন্তু তাঁর সেই পথে না হাঁটা অনেককেই অবাক করেছে।

ট্রাম্প ও মাস্ক দুজনই ঝানু ব্যবসায়ী। দুজন রসিকও বটে। বছরের পর বছর ধরে পাল্টাপাল্টি টুইটে এ দুই ধনকুবেরের অম্লমধুর সম্পর্কের রসায়ন দেখেছেন নেটিজেনরা। অনেকের ধারণা, সম্পর্কের এ রসায়ন মাস্কের মালিকানাধীন টুইটার থেকে দূরে রেখেছে ট্রাম্পকে। যদিও মাস্ক টুইটার কেনার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, এতে তিনি অনেক খুশি।

এত দিন মাস্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও গত জুলাইয়ে এ ব্যবসায়ীর দিকে অভিযোগের তির ছোড়েন ট্রাম্প। আলাস্কায় এক সমাবেশে মাস্ককে ‘বাজে শিল্পী’ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, মাস্ক তাঁকে ভোট দিয়েছিলেন। আর এ কথা মাস্ক নিজেই তাঁকে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে মাস্ক রিপাবলিকান কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

সময়টা ২০১৬ সালের নভেম্বর। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত। ওই সময় মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন মাস্ক। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প যোগ্য ব্যক্তি নন। এর চেয়ে বরং হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হলেই ভালো। হিলারির অর্থনৈতিক ও পরিবেশসংক্রান্ত নীতি বেশ প্রশংসনীয়।’

আরও পড়ুন

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে একজন প্রার্থী সম্পর্কে মাস্কের মতো ব্যক্তির এমন খোলামেলা মন্তব্য অবাক করেছিল অনেককে। তবে ট্রাম্প তখন এর জবাব দেননি।

উল্টো ক্ষমতায় এসে তিনি মাস্ককে হোয়াইট হাউসে ডেকে নেন। তাঁকে প্রেসিডেন্টের অর্থনীতিবিষয়ক পরামর্শক কাউন্সিলে যুক্ত করেন। এ নিয়োগের ফলে অনেকেই ভেবেছিলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের সম্পর্ক বেশ মধুর। কিন্তু বেশি দিন এ সম্পর্ক টেকেনি। পরবর্তী সময়ে মাস্ক বলেছিলেন, তিনি পরিবেশ ও অভিবাসীদের নিয়ে আরও ভালো নীতি প্রণয়নে তদবিরের স্বার্থে ওই পদ ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।

২০১৭ সালে ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ২০১৫ সালে সই করা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনেন। এর প্রতিবাদে ওই বছরের জুনে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেন মাস্ক। প্রশাসনিক পদ ছেড়ে দেন তিনি। মাস্ক টুইটে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সত্য আড়াল করা সম্ভব নয়। প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে আসা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্বের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।’

আরও পড়ুন

মাস্ক সিএনবিসির সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। সেই একই চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ট্রাম্প উল্টো মাস্কের প্রশংসা করেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি, ট্রাম্প আর তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইলন মাস্ক একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তাঁর প্রশংসা করতেই হয়। তিনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেসলার ভিত্তি মজবুত করেছেন। পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের মাধ্যমে মহাকাশে বাণিজ্যিক রকেট পাঠানো শুরু করেছেন।

শুধু তা–ই নয়, সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিদ্যুতের আবিষ্কারক, আমেরিকান উদ্ভাবক টমাস আলভা এডিসনের সঙ্গে তাঁর সাবেক উপদেষ্টা মাস্ককে তুলনা করেন। বলেন, ‘মাস্ক আমাদের সময়ের এক মহান প্রতিভা।’

ট্রাম্প ও মাস্কের অম্লমধুর লড়াই দেখা গেছে গত মাসেও। মাস্কের টুইটার কেনার ঘটনায় প্রশংসা করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘অবশেষে টুইটার একজন সুস্থ মানুষের হাতে গেছে। এতে আমি অনেক খুশি।’ এর পরপরই মাস্ক ট্রাম্পকে টুইটারে ফেরার আহ্বান জানান। কিন্তু ট্রাম্প তাতে আগ্রহ দেখাননি।

তত দিনে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ বেশ জোরেশোরে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ক্যালির্ফোনিয়ায় টেসলার কারখানা সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেন স্থানীয় জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তা। এ ঘটনায় প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় মাস্কের। তখন ট্রাম্প টুইট করে মাস্কের পক্ষে অবস্থান নেন। পাল্টা টুইটে মাস্ক বলেন, ‘ধন্যবাদ।’

আরও পড়ুন

এর ঠিক দুই বছর পর গত মে মাসে ট্রাম্পের বন্ধ হয়ে যাওয়া টুইটার ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন মাস্ক। তত দিনে এ ধনকুবের টুইটারে তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। মাস্ক বলেন, ‘ট্রাম্পকে টুইটার থেকে নিষিদ্ধ করাটা ভীষণ বাজে একটি সিদ্ধান্ত ছিল।’ এর আগে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে টুইটার থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প।

এত দিন মাস্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও গত জুলাইয়ে এ ব্যবসায়ীর দিকে অভিযোগের তির ছোড়েন ট্রাম্প। আলাস্কায় এক সমাবেশে মাস্ককে ‘বাজে শিল্পী’ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, মাস্ক তাঁকে ভোট দিয়েছিলেন। আর এ কথা মাস্ক নিজেই তাঁকে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে মাস্ক রিপাবলিকান কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মাস্ক মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বোকার মতো অভিনয় করেছেন।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে টুইটার থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প
প্রতীকী ছবি: এএফপি

ট্রাম্পের এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন মাস্ক। টুইটে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের এ অভিযোগ সত্য নয়।’ তবে এখানেই থামেননি মাস্ক। তাঁর বক্তব্য, পরবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের লড়াই করা উচিত হবে না। কেননা, ট্রাম্পের বয়স ৭৬ বছর হয়ে গেছে। এ বয়সী কারও প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুন

এর জবাবে নিজের গড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাস্কের সমালোচনা করে বিশাল একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। বলেন, হোয়াইট হাউসে মাস্ক নিজেকে একজন ট্রাম্পভক্ত ও রিপাবলিকান সমর্থক হিসেবে দাবি করেছিলেন। এখন ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি মাস্কের দুটি প্রতিষ্ঠান টেসলা ও স্পেসএক্সের সমালোচনা করেন।

ট্রাম্প ও মাস্কের এ অম্লমধুর লড়াই দেখা গেছে গত মাসেও। মাস্কের টুইটার কেনার ঘটনায় প্রশংসা করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘অবশেষে টুইটার একজন সুস্থ মানুষের হাতে গেছে। এতে আমি অনেক খুশি।’ এর পরপরই টুইটারের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাস্ক ট্রাম্পকে টুইটারে ফেরার আহ্বান জানান। কিন্তু ট্রাম্প তাতে আগ্রহ দেখাননি।  

বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন অনিন্দ্য সাইমুম ইমন।

আরও পড়ুন