অসুস্থতা টিকার কারণে নয়: অক্সফোর্ড

করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে কাজ করছেন অক্সফোর্ডের গবেষকেরা
ছবি: রয়টার্স

অক্সফোর্ডের টিকা পরীক্ষার সময় যুক্তরাজ্যে হঠাৎ এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়। এখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যে কারণে অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়েছিল, তা টিকা-সংশ্লিষ্ট ছিল না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের তথ্যসংশ্লিষ্ট একটি নথি অনলাইনে পোস্ট করেছে অক্সফোর্ড। টিকা তৈরিতে কাজ করছে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে করোনা প্রতিরোধে টিকা নিয়ে তৃতীয় বা চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা চালাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকা। হঠাৎ করেই একজন টিকাগ্রহীতা স্বেচ্ছাসেবী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৬ সেপ্টেম্বর করোনার টিকার পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অবশ্য টিকা পরীক্ষা বন্ধ করা নিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, এটা নিয়মিত পরীক্ষার অংশ। তবে অপ্রত্যাশিত ওই অসুস্থতা সম্পর্কে তখন বিস্তারিত কিছু জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি ‘ট্রান্সভার্স মাইলিটিসি’ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এতে স্পাইনাল কর্ডের (স্নায়ু রজ্জু) ব্যথা হয়। এটি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়।

টিকাটি নেওয়ার পর সংবেদনহীনতা বা স্নায়বিক দুর্বলতাসহ অব্যক্ত স্নায়বিক লক্ষণ বিকাশের বিষয়টি উঠে এলে নিরাপত্তা পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় টিকটির পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে স্বতন্ত্র পর্যালোচনার পর দেখা যায়, ওই অসুস্থতার সঙ্গে টিকার যোগসূত্র থাকার সুনির্দিষ্ট বা যথাযথ প্রমাণ নেই।

অক্সফোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, তাদের টিকা এজেড ১২২১ বা চ্যাডক্স ১ একোভ-১৯। টিকাটি নেওয়ার পর সংবেদনহীনতা বা স্নায়বিক দুর্বলতাসহ অব্যক্ত স্নায়বিক লক্ষণ বিকাশের বিষয়টি উঠে এলে নিরাপত্তা পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় টিকটির পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে স্বতন্ত্র পর্যালোচনার পর দেখা যায়, ওই অসুস্থতার সঙ্গে টিকার যোগসূত্র থাকার সুনির্দিষ্ট বা যথাযথ প্রমাণ নেই।

যুক্তরাজ্যের ‘মেডিসিনস হেলথ রেগুলেটরি অথরিটি’ (এমএইচআরএ) এটিকে নিরাপদ বলে অনুমোদন দেওয়ার পরই ট্রায়াল আবার শুরু হয়। টিকার নিরাপত্তা দেখার জন্য একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই পদক্ষেপকে রুটিন কাজের অংশ বলেই জানায়।

বিশেষজ্ঞরাও টিকার পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক আনা পি ডারবিন বলেন, যেভাবে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালিত হয়, এটা তার উদাহরণ। পরীক্ষা বন্ধ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা পুরোপুরি ঘটনাটি পর্যালোচনা করতে সময় নিচ্ছে। এতে টিকার সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। তদন্ত বা পর্যালোচনার জন্য পরীক্ষা বন্ধ রাখার কথা আগেও শোনা গেছে। এটা মনে রাখতে হবে, টিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এভাবেই টিকার নিরাপত্তা পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন

নিউইয়র্কের বেলেভু হাসপাতালের স্নায়ুবিশেষজ্ঞ জোনাথন হাওয়ার্ড বলেন, টিকা প্রয়োগে ট্রান্সভার্স মাইলিটিসির ঘটনা জানা গেলেও আগে কখনো এর প্রমাণ মেলেনি। স্নায়ু রজ্জুর প্রদাহ মূলত শরীরের অটোইমিউন বা স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধী প্রক্রিয়ার কারণে ঘটে থাকে। এতে শরীর নিজের স্নায়ুতন্ত্রের কোষে আক্রমণ করে। এটি যেকোনো সংক্রমণ, অন্তর্নিহিত অটোইমিউন রোগ বা অজানা কারণে ঘটতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সফোর্ডের টিকা পরীক্ষার মতো বড় বড় পরীক্ষায় কিছু অংশগ্রহণকারীর মধ্যে কখনো অসুস্থতা দেখা দেয়। তখন টিকা পরীক্ষা থামিয়ে এ নিয়ে আরও পর্যালোচনা করে টিকা কোনো মারাত্মক প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে কি না, তা দেখা হয়।

ডারবিন বলেন, এই প্রতিকূল ঘটনাকে মূলত যেকোনো অপ্রীতিকর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা টিকা দেওয়ার পর ঘটতে পারে। এটি টিকার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতেও পারে আবার তা না-ও হতে পারে।

ইতিমধ্যে টিকার পরীক্ষা আবার যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় চালু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখনো পরীক্ষাটি চালু করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে অক্সফোর্ড বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য দেওয়া হয়নি।

এখন সারা বিশ্বে করোনার যে ৯টি টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে, এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ডের এই টিকা অন্যতম।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, শনিবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ধারণা করছে যে টিকার পরীক্ষা অব্যাহত রাখা নিরাপদ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক ট্রায়াল আবার শুরু করার এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত এটাই প্রমাণ করে যে আমরা সব সময়ই নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেব। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল আমরা আমাদের বিজ্ঞানীদের কার্যকর টিকা আনার পক্ষে সমর্থন দেব।’

এক বিবৃতিতে অক্সফোর্ড জানায়, এ ধরনের বড় মাপের ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কিছু অংশগ্রহণকারী অসুস্থ হয়ে পড়বে বলেই ধরে নেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি এবং একটি স্বতন্ত্র রিভিউ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এখন থেকে এই গবেষণা চলবে বলেও জানানো হয়।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৮০টি টিকার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তবে কোনোটিই এখনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে পারেনি। আশা করা হচ্ছে, অক্সফোর্ডের টিকাটি বাজারে সবার আগে আসবে। কারণ এরই মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় সাফল্য এসেছে।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ হাজার অংশগ্রহণকারী ঠিক করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে করা হয় এবং এতে বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে।