ইউরোপেও করোনা চিকিৎসায় অনুমোদন পেল ডেক্সামেথাসন স্টেরয়েড

ডেক্সামেথাসন স্টেরয়েড
ছবি: রয়টার্স

কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন–স্বল্পতায় ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য গতকাল শুক্রবার থেকে ডেক্সামেথাসন স্টেরয়েড ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপের ওষুধ সংস্থা (ইএমএ)।

সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন, এমন রোগীদের চিকিত্সায় লাগতে পারে ডেক্সামেথাসন। আজ শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রকদের বিবৃতিতে বলা হয়, গবেষণা তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে ইএমএ প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোরদের মধ্যে ডেক্সামেথাসন ব্যবহারের অনুমোদন দিচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, ১২ বছর বয়স ও কমপক্ষে ৪০ কেজি ওজন হতে হবে এবং যাদের পরিপূরক অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন পড়বে তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে।

গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভেন্টিলেশনে থাকা করোনাভাইরাস রোগীদের ডেক্সামেথাসন দেওয়ার পর ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাওয়ার হার ২৯ শতাংশ আর যাঁদের এ ওষুধ দেওয়া হয়নি তাঁদের মৃত্যুর হার ৪১ শতাংশ। যাঁরা ভেন্টিলেশন বাদে শুধু অক্সিজেন পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন পাওয়ার পর মৃত্যুর হার ২৩ শতাংশ আর ডেক্সামেথাসন না পেলে মৃত্যুর হার ২৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন

এ মাসের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ চিকিত্সার জন্য ডেক্সামেথাসনের মতো কর্টিকোস্টেরয়েডের মজুত রাখতে দেশগুলোকে উত্সাহিত করেছিল।

চিকিৎসা সাময়িকী ‘জেএএমএ’ প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কর্টিকোস্টেরয়েড পরিবারের ডেক্সামেথাসন জাতীয় ওষুধ মারাত্মক কোভিড-১৯ উপসর্গযুক্ত রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ২৮ দিনের মধ্যে ২১ শতাংশ কমিয়েছে। অন্য কোনো ওষুধ এত মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে পারেনি।

গত জুনে বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় দুই হাজার করোনা রোগীর শরীরে ডেক্সামেথাসন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন। প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ মৃত্যুঝুঁকি ৪০ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে। আর যাঁদের অক্সিজেন নেওয়া দরকার, সেসব রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে ২৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।

৩০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দাম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডেক্সামেথাসন মুখে খাওয়ার ওষুধের দাম সর্বনিম্ন ৬০ পয়সা থেকে ১ টাকা ১৫ পয়সা পর্যন্ত। ইনজেকশনের দাম সর্বনিম্ন ১৫ থেকে ৩০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন খুব একটা কার্যকর নয়। অর্থাৎ যে করোনারোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় না, তাঁদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন প্রয়োজন নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ২০ জন করোনা রোগীর মধ্যে ১৯ জনেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। আবার যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাঁদের মধ্যেও অধিকাংশই সুস্থ হয়ে যান। তবে কারও কারও অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন সুবিধার প্রয়োজন হয়। এই উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই উপকারী হিসেবে পাওয়া গেছে ডেক্সামেথাসনের নাম।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা দলের প্রধান অনুসন্ধানকারী ও অধ্যাপক পিটার হরবি বলেন, এটাই একমাত্র ওষুধ, যার প্রয়োগে মৃত্যুহার কমতে দেখা গেছে এবং সত্যিকার অর্থেই বেশ ভালো পরিমাণে কমে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন