ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা কম

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এই ফল পাওয়া গেছে

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

যে ব্যক্তি একবার করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন, কমপক্ষে ছয় মাসের মধ্যে তাঁর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশ কম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এই ফল পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, এই গবেষণার মধ্য দিয়ে কোভিডের পুনঃসংক্রমণের বিষয়ে নতুন দিক উন্মোচিত হলো।


বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এই গবেষণা চালানো হয়েছিল ব্রিটিশ স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর। এই ব্যক্তিরা মূলত কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে ছিলেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথমবার কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কমপক্ষে ছয় মাসের মধ্যে পুনঃসংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশ কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল করোনা মহামারি মোকাবিলায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। এটি করোনায় আক্রান্ত লোকজনের স্বল্প মেয়াদে আবার সংক্রমিত না হওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের নিশ্চয়তা দিতে পারে।


অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সংশ্লিষ্ট গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ডেভিড অ্যার বলেন, ‘এটি সত্যিই ভালো সংবাদ। কারণ এতে আমরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারব যে একবার কোভিডে আক্রান্ত হলে স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও তাঁরা পুনরায় সংক্রমিত হবে না।’  

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটি বিষয় বেশ কিছুদিন ধরেই বৈশ্বিক পর্যায়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। আর তা হলো, এই রোগে আক্রান্তের পর সেরে ওঠা ব্যক্তির দেহে কোভিড প্রতিরোধের ক্ষমতা কত দিন কার্যকর থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেরে ওঠা ব্যক্তি কিছুদিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।


তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, তাতে অংশগ্রহণকারী ব্রিটিশ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা বিরল। ডেভিড অ্যার বলেছেন, কোভিডে একবার আক্রান্ত হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেহে ওই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে। কমপক্ষে ছয় মাসের মধ্যে পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা দেখা যায়নি।

এটি সত্যিই ভালো সংবাদ। কারণ এতে আমরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারব যে একবার কোভিডে আক্রান্ত হলে স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও তাঁরা পুনরায় সংক্রমিত হবে না
ডেভিড অ্যার, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক


গবেষণাটি চলেছিল প্রায় ৩০ সপ্তাহ ধরে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এটি চলে। এই গবেষণার ফলাফল অন্য বিজ্ঞানীরা এখনো পরীক্ষা (পিয়ার রিভিউড) করে দেখেননি। তবে গবেষণাপত্রটি এরই মধ্যে মেডআরএক্সিভ নামের স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এ অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, বয়স্ক মানুষের দেহে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাসের টিকার প্রতিক্রিয়া ‘উৎসাহব্যঞ্জক’। ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী লোকজনের দেহে এই টিকার রোগ প্রতিরোধসংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া ভালো। যুক্তরাজ্য সরকারের বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা গ্রুপের অন্যতম সদস্য মাইকেল টিলডেসলি বলেছেন, অক্সফোর্ডের এই টিকা করোনাভাইরাস ঠেকানোর লড়াইয়ের অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। টিকাটির দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা করে তিনি বলেছেন, এই টিকা করোনায় মৃত্যু ঠেকাতে প্রধান কার্যকর উপায় হয়ে উঠতে পারে।


ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে মৃত মানুষের সংখ্যা ১৩ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৮৮ জন।