ভারতশাসিত কাশ্মীরে জোট সরকার ছাড়ল বিজেপি, মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবার পদত্যাগ

নরেন্দ্র মোদি ও মেহবুবা মুফতি
নরেন্দ্র মোদি ও মেহবুবা মুফতি

ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের জোট সরকার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আজ মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেয় রাজ্য বিজেপি। এর কিছুক্ষণ পরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) মেহবুবা মুফতি। এখন গভর্নরের শাসন জারি হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে পিডিপি ও বিজেপি এক হয়ে জম্মু-কাশ্মীরে জোট সরকার গঠন করেছিল। তিন বছর পর এবার দুই দলের দুটি পথ আলাদা হয়ে গেল। বিজেপির মন্ত্রীরা দিল্লিতে দলীয় সাধারণ সম্পাদক অমিত শাহর সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকের পরপরই জোট ছাড়ার ঘোষণা আসে। এর মিনিট খানেক পর জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি পদত্যাগ করেন।

মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাম মাধব বলেন, জোট সরকারে থাকার বিষয়টি বিজেপির জন্য ক্রমে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রীয় সরকার ও দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড মনে করেছে, আমাদের সরকার থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত।’

রমজান মাস উপলক্ষে কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি চলছিল। রাম মাধবের বক্তব্য, এই যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। বিজেপির এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থের কথা এবং কাশ্মীর যে ভারতের একটি অংশ—এ দুটি বিষয় মাথায় রেখে আমাদের বলতেই হচ্ছে যে জম্মু-কাশ্মীরের শাসনভার গভর্নরকে হস্তান্তর করা উচিত।’

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল মাসে কাঠুয়া জেলায় যাযাবর মুসলিম সম্প্রদায়ের আট বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিজেপি-পিডিপি জোটে ফাটল ধরে। ওই সময় রাজ্য সরকারের বিজেপির মন্ত্রী চৌধুরী লাল সিং ও চন্দর প্রকাশ গঙ্গা কাঠুয়ায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে মিটিং-মিছিল করেছিলেন। এরপরই দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রবল বিক্ষোভের মুখে পিছু হটে বিজেপি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা জম্মু-কাশ্মীরে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা শুরু করেন।

বিজেপির দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, ওই সময় আয়োজিত এক সমাবেশে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আর কাউকে গ্রেপ্তার না করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁরা। তৎকালীন মন্ত্রী চৌধুরী লাল সিং ও চন্দর প্রকাশ গঙ্গার এই ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা। পরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পদত্যাগপত্র জমা দেন মন্ত্রীদ্বয়। বিশ্লেষকদের মতে, মেহবুবা মুফতির দলের সঙ্গে জোট টিকিয়ে রাখতেই ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে জম্মু-কাশ্মীরে সামরিক অভিযান চালানো থেকে বিরত ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গত রোববার সিদ্ধান্ত হয়, রমজান মাস শেষ হয়ে যাওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। এর পরই জম্মু-কাশ্মীরের জোট সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল বিজেপি। মূলত পিডিপির নেতা মেহবুবা মুফতির আরজির পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় সরকার যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে সম্প্রতি সাংবাদিক হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে বিজেপি নেতা রাম মাধব মঙ্গলবার বলেছেন, ‘রাজ্যের নাগরিকদের বেঁচে থাকার ও মুক্তমতের অধিকার এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।’

পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে জম্মু-কাশ্মীরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুজাত বুখারিকে শ্রীনগরে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে গত রোববার একাধিক টুইট বার্তায় ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, রমজান মাস শেষ হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীগুলো পুনরায় ওই রাজ্যে অভিযান চালানো শুরু করবে। বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এ সিদ্ধান্তেই ভেঙে গেছে পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার। কারণ পিডিপি নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এখনই অভিযান শুরুর পক্ষে ছিলেন না।

জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যসভায় পিডিপির দখলে রয়েছে ২৮টি আসন। অন্যদিকে বিজেপির আছে ২৫ জন আইনপ্রণেতা। এই রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে আসন প্রয়োজন ৪৫টি।

আরও পড়ুন...