দাম কমবে নতুন আইফোনের?

নতুন আইফোন
নতুন আইফোন

দাম বেশি বলে অনেকেই নতুন আইফোন কিনতে পারছেন না। তাঁদের আশা, দাম যদি একটু কমে! কিন্তু দাম কমবে কি? বিশ্লেষকদের ধারণা, নতুন আইফোনের চাহিদা কম থাকায় দাম কমানোর পথে হাঁটতেও পারে অ্যাপল। বাজারে ছাড়ার মাত্র এক মাসের মধ্যেই নতুন আইফোনের দাম কমানোর পরিকল্পনা করছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুরুতে আইফোন এক্সআর মডেলের দাম জাপানের বাজারে কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের টেলিকম অপারেটরদের ভর্তুকি দেবে অ্যাপল। দেশটিতে এখনো আইফোন ৮ মডেলটি জনপ্রিয়। নতুন করে বাজারে আসা আইফোন সেখানকার ক্রেতাদের মনে ধরেনি।

অবশ্য আইফোন এক্সআরের দাম কতটা কমানো হচ্ছে, সে বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়নি। জাপান ছাড়া অন্য কোনো দেশে আইফোনের দাম কমানোর পরিকল্পনা আছে কি না, সে বিষয়ে অ্যাপলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাশ্রয়ী দামের আইফোন হিসেবে বাজারে আসা এক্সআর মডেলের চাহিদা কম। নতুন আইফোনের নির্মাতা ফক্সকন ও পেগাট্রনকে উৎপাদন কমাতে বলেছে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি প্রয়োজনে ছোট প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রেখেছে অ্যাপল। শুরুতে আইফোন এক্সআর মডেলের জন্য ৬০টি প্রডাকশন লাইন প্রস্তুত রেখেছিল ফক্সকন। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে ৪৫টি প্রডাকশন লাইনে কাজ হচ্ছে।

শুধু আইফোন এক্সআর মডেল নয়, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে যে নতুন তিন মডেলের আইফোনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সবগুলোর উৎপাদন কমিয়েছে অ্যাপল।

কয়েক সপ্তাহ আগে বিনিয়োগকারীদের কাছে অ্যাপলের নতুন আইফোন বিক্রি কম হওয়ার খবরটি বড় ধরনের ধাক্কা হয়েই এসেছে। ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকেরা নতুন আইফোনের চাহিদা সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, অ্যাপল তার চেয়েও কম ডিভাইস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের জন্যও সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। নতুন ফোনের চাহিদা কমে যাওয়ায় স্ক্রিন নির্মাতা জাপান ডিসপ্লে ইনকরপোরেশন তাদের পুরো বছরের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে।

অ্যাপলের তিনটি মডেলের নতুন আইফোনের মধ্যে সবচেয়ে চাহিদা কম আইফোন এক্সআরের। অ্যাপল এ মডেলের আইফোনের উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমিয়েছে। গত অক্টোবর মাস থেকে এই মডেলের আইফোন বিক্রি শুরু করে অ্যাপল। সেপ্টেম্বর থেকে বিক্রি শুরু হয় আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সের।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, এ বছর কম দামি আইফোন হিসেবে এক্সআর মডেলটি বাজারে এনেছে অ্যাপল। ৭৪৯ মার্কিন ডলার দামের ফোনটি প্রত্যাশার চেয়ে তিন কোটি ইউনিট কম তৈরি করবে অ্যাপল। শুরুতে ১০ কোটি ইউনিট আইফোন এক্সআর বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু চাহিদা না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসতে হয়েছে অ্যাপলকে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের চোখে এবারের নতুন তিনটি মডেলের আইফোনে নতুনত্ব নেই। এর নকশা গত বছরে বাজারে আনা আইফোন এক্সের মতো। তবে এতে বিভিন্ন ফিচারের কারণে দামে পার্থক্য এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৬৪ জিবি আইফোন এক্সআরের দাম ৭৪৯ মার্কিন ডলার। ১২৮ জিবি ও ২৫৬ জিবি এক্সআর কিনতে যুক্তরাষ্ট্রে খরচ হবে যথাক্রমে ৭৯৯ ডলার আর ৮৯৯ ডলার। আইফোন এক্সএসের দাম শুরু ৯৯৯ মার্কিন ডলার থেকে। সাড়ে ছয় ইঞ্চি মাপের আইফোন এক্সএস ম্যাক্সের দাম ১ হাজার ৯৯ মার্কিন ডলার থেকে শুরু।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের আইফোনের চড়া দামের কারণে ক্রেতারা তা কিনতে পারছেন না। এর বাইরে বিশ্বজুড়েই স্মার্টফোনের বাজার কমেছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আসার সংখ্যা ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ইউনিট ছাড়িয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ ওই প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন বাজারে আসার হার ৩ শতাংশ কমেছে। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের করা মার্কেট মনিটর সার্ভিস প্রতিবেদনে বলা হয়, স্মার্টফোনের বাজারের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। দুইয়ে উঠে এসেছে হুয়াওয়ে আর তিনে নেমে গেছে অ্যাপল। আইফোনকে ঠেকাতে অন্যান্য ব্র্যান্ডের ফ্ল্যাগশিপ ফোনেও ঝুঁকছেন ক্রেতারা।