অনন্য উদাহরণ

মিরসরাইয়ের এই ছয় শিক্ষার্থী গত পাঁচ বছরে এক দিনও স্কুল কামাই করেনি। (বাঁ থেকে) এস এম ইফতেখারুল, কাওছার হোসেন, তাছলিমা আক্তার, শাহরিয়া ইসরাত, মাছুমা খানম ও প্রিয়া সরকার। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মিরসরাইয়ের বিশ্বদরবার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো
মিরসরাইয়ের এই ছয় শিক্ষার্থী গত পাঁচ বছরে এক দিনও স্কুল কামাই করেনি। (বাঁ থেকে) এস এম ইফতেখারুল, কাওছার হোসেন, তাছলিমা আক্তার, শাহরিয়া ইসরাত, মাছুমা খানম ও প্রিয়া সরকার। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মিরসরাইয়ের বিশ্বদরবার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।  ছবি: প্রথম আলো

ঝড়-বৃষ্টিতে কতবার ভিজতে হয়েছে তার হিসাব নেই। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তাও দমাতে পারেনি তাদের। অসুস্থতার কারণে কখনো কখনো শরীর কাহিল হয়েছে, তবু হাল ছাড়েনি। পাঁচ বছরে এক দিনের জন্যও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেনি তারা। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি-এই পাঁচ বছরে ক্লাসে শতভাগ উপস্থিতি ছিল তাদের। ছয় শিক্ষার্থীর কীর্তি এমনই অনন্য। তাদের মধ্যে চারটি মেয়ে ও দুটি ছেলে। 

বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছয় শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে স্বীকৃতি সনদ। তাদের বাড়ি মোটেও বিদ্যালয়ের আশপাশের কোনো এলাকায় নয়। দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশ্বদরবার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে তারা।

ছয় শিক্ষার্থী হলো তাছলিমা আক্তার, মাছুমা খানম, শাহরিয়া ইসরাত, এস এম ইফতেখারুল, প্রিয়া সরকার ও কাওছার হোসেন। এর মধ্যে তাছলিমা আক্তার মানবিক, কাওছার হোসেন বিজ্ঞান আর অন্যরা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী।

বিশ্বদরবার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে মোটবাড়িয়া এলাকায় মাছুমা খানমের বাড়ি। ২০১৪ সালে মাছুমা যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত তখন একবার বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যায়। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে গর্তে পড়ে সারা শরীর ভিজে যায় তার। এত কিছুর পরও স্কুলে গেছে সে।

ব্যতিক্রমী এই অর্জন কীভাবে সম্ভব হলো? জানতে চাইলে মাছুমা বলে, ‘প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকা নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল।’

মাছুমার মা তহুরা খানম বলেন, অসুস্থ হলেও কারও বারণ শুনত না, স্কুলে যেতই। কোথাও বেড়াতে গেলে স্কুল খোলার আগেই মাছুমা বাড়িতে চলে আসত।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়টির বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ছয় শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় স্বীকৃতি সনদ।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল্লাহ বলেন, সনদ দিয়ে তাদের অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ছয় শিক্ষার্থীর অর্জন সম্পর্কে মিরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির খান বলেন, চেষ্টা করলে যে পারা যায়, এটি তার বড় উদাহরণ। এদের দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে।