
রোগীরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। তাঁদের সময় দিতে হবে, নিজেদের লোক ভাবতে হবে। রোগ ধরতে না পারলে চিকিৎসককে অক্ষমতা স্বীকার করতে হবে। না জেনে রোগীকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া যাবে না। এই নৈতিকতার চর্চা করলে রোগীরা ভুল চিকিৎসার শিকার হবেন না।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় সার্টিফিকেট কোর্স অব ডার্মাটোলজির (ডিওসি) ১০–১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা। টেলি ডার্মাটোলজি ফাউন্ডেশনের এ আয়োজনে অংশীজন ছিল হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
চর্মরোগ বিষয়ে ছয় মাসের কোর্স ডিওসি। ২০১৪ সালে এই কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে ডিওসির ১৬তম ব্যাচ চলছে। ইতিমধ্যে ৫১০ জন চিকিৎসক এই কোর্স করেছেন। চর্মরোগের ওপর ডিপ্লোমা কোর্স চালুর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সাবেক সভাপতি ও বারডেমের সাবেক মহাপরিচালক নাজমুন নাহার বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা আমাদের নৈতিক হতে হবে। রোগীদের নিজেদের লোক ভাবতে হবে।’
কোনো একটি বিষয়কে জনপ্রিয় করতে শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে জানিয়ে নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমাদের সময় ডার্মাটোলজি (চর্মরোগ বিভাগ) বিষয়টাকে বুঝতাম কেবল খালি মলম লাগানো। এখন সেখানে অনেক বিষয় যুক্ত হয়েছে। এটা বর্তমানে বড় বিষয়।’
না জানলে চিকিৎসকদের বলতে হবে, ‘জানি না।’ এ বিষয়ে সৎ থাকার আহ্বান জানান ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান আবিদ হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘কোনো রোগী এলে তাঁর রোগ সম্পর্কে না জানলে বলেন, “আমি এটা পারছি না। অমুকের কাছে যান, তিনি হয়তো আপনার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।” একজন রোগী অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। এত কষ্ট করে আসার পর যদি সত্য কথা না পান, তখন তাঁরা কষ্ট পান। তার কুফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হয়।’
অরোরা স্কিন অ্যান্ড অ্যাস্থেটিকসের চেয়ারম্যান সৈয়দ আফজালুল করিম বলেন, ‘আমরা আজ গর্ব অনুভব করছি যে এতগুলো চিকিৎসককে কিছু শেখাতে পেরেছি যে তাঁরা ভুল চিকিৎসা করবেন না। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, চর্মরোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসকেরা যেন ভুল চিকিৎসা না দেন। চিকিৎসকেরা ডায়াগনসিস (রোগ শনাক্ত) যেন করতে পারেন।’ তিনি বলেন, রোগী এলে দুটো শব্দ লিখে দিলেন, এটা চিকিৎসা নয়। রোগীর কথা শুনতে হবে, তাকে সময় দিতে হবে। তাহলে রোগী ভারতে যাবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডার্মাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এম এ ওহাব বলেন, চিকিৎসকেরা কোনো চর্মরোগীকে কোথায় স্টেরয়েড দেবেন, কোন রোগীকে অ্যান্টিফাঙ্গাল দেবেন, কাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন—এগুলো শেখানোর উদ্দেশ্যেই কোর্সটা শুরু করেছিলেন তাঁরা। কোর্স সফল হবে তখনই, যখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা এগুলো উপলব্ধি করতে পারবেন।
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ডার্মাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহিদুল্লাহ বলেন, আনন্দের বিষয় হলো যে এখান থেকে কোর্স করে চিকিৎসকেরা চর্মরোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। কোর্সের বিষয়ে কোনো সমালোচনা থাকলে তা সাদরে গ্রহণ করা হবে।