আদরের ভাইটিকে খুঁজছে দগ্ধ জারিফ

আদরের ভাইটিকে খুঁজছে দগ্ধ জারিফ
আদরের ভাইটিকে খুঁজছে দগ্ধ জারিফ

‘জায়ানকে নিয়ে আসো আপু। এখানকার বড় (হাসপাতালের) ফ্লোরটা পরিষ্কার। ও খেলতে পারবে এখানে।’ ধানমন্ডির সিটি হাসপাতালের ৫০৪ নম্বর কেবিনে শুয়ে ছোট ভাই জায়ান বিন নেওয়াজের খোঁজ করছে আর এ কথা বলছে জারিফ বিন নেওয়াজ। ১১ বছর বয়সী জারিফ জানে না যে ১৪ মাস বয়সী ওর আদরের ছোট্ট ফুটফুটে ভাইটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। বড় ভাই সালীন ও বাবা শাহনেওয়াজের মৃত্যুর কথাও সে জানে না। সে এটাও জানে না যে একই হাসপাতালের আইসিইউতে দগ্ধ শরীরে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন মা সুমাইয়া খানম।
তবে সময় যত যাচ্ছে, উত্তরার ফ্ল্যাটে এক সপ্তাহ আগে আগুন লাগার ঘটনা ধীরে ধীরে জারিফের স্মৃতিপটে ভেসে উঠতে শুরু করেছে। এমনটাই জানিয়েছেন জারিফের চাচাতো বোন মিথিলা জামান। বড় চাচা মনিরুজ্জামানের মেয়ে মিথিলাই এখন সিটি হাসপাতালে জারিফের একমাত্র সঙ্গী।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর বাড়ির সাততলার একটি ফ্ল্যাটে মার্কিন দূতাবাসের প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ সপরিবারে দগ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আনার পরপরই মারা যায় তাঁর ছেলে সালীন বিন নেওয়াজ (১৫) ও ১৪ মাসের শিশু জায়ান বিন নেওয়াজ। এক দিন পর মারা যান শাহনেওয়াজ (৫০)। শরীরের ৯০ ভাগ পোড়া নিয়ে এখন সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহনেওয়াজের স্ত্রী সুমাইয়া।
শরীরের ৬ ভাগ পুড়েছে জারিফের। শিশুটির ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা। বাঁ পায়ের নিচের অংশেও ব্যান্ডেজ করা। তবে ডান পায়ের নিচে পুড়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হবে। প্রাণ বাঁচলেও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা জারিফ মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠে। কখনো মায়ের কাছে যেতে চায়, আবার বড় ভাই সালীনের কথাও জিজ্ঞেস করে। তবে বেশি জানতে চায়, ছোট ভাই জায়ানের কথা।
মিথিলা আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন লাগার আগের দিনগুলোতে জারিফ আর জায়ানই ওদের বাড়ি মাতিয়ে রাখত। তাই ছোট ভাই জায়ানের খোঁজ করছে জারিফ। সে জন্য ওর পাশে সব সময় আমি থাকার চেষ্টা করি।’ মোবাইল সেট দিয়ে গেম খেলতে দেওয়া হচ্ছে, যেন মনটা একটু অন্যদিকে থাকে। কিন্তু এর পরও আগুনের ঘটনা বলতে থাকে জারিফ। মিথিলা আরও বলেন, ঘটনার সময় জারিফ ড্রয়িং রুমে ছোট খাটে ঘুমিয়ে ছিল। আগুনের শিখা যখন ওর চারপাশ ঘিরে ফেলে, সেই সময় জারিফ ছুটে ছোট ভাই আর মাকে খুঁজছিল। জায়ানকে নিয়ে ওর বাবা যে নিচে নেমে গিয়েছিল, সেই দৃশ্যও ওর বেশ ভালোই মনে আছে।
তিন-চার দিন আগে মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছিল জারিফ। তবে মায়ের কণ্ঠস্বর অচেনা মনে হয়েছিল ওর কাছে। কথা বলার একপর্যায়ে খানিকটা কেঁদে ওঠে জারিফ। ফোন রেখে বোন মিথিলাকে বলে, ‘আপু, আম্মু এমন করে কথা বলছে কেন? আমি এখন কথা বলব না।’

শাহনেওয়াজের পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে জ্বর কমে গেছে জারিফের। এখন খেতে পারছে। বেশি খাচ্ছে ফল। আর চকলেট দেওয়া হলে জারিফ বলে, সালীন আর জায়ানের জন্য নিয়ে যেয়ো। ওরা চকলেট খেতে খুব পছন্দ করে।

সিটি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট শহীদুল বারী আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহে জারিফের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হবে। ওর মায়ের অবস্থা স্থিতিশীল। তরল খাবার অল্প অল্প খাচ্ছে। তবে দিন দিন দুর্বল হচ্ছে তাঁর শারীরিক অবস্থা।

আরও পড়ুন: