চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের টংকাবতী খালে স্থাপিত রাবার ড্যাম এই অঞ্চলে কৃষিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি পদুয়া ইউনিয়নের হাঙ্গর খাল এবং চুনতি ইউনিয়নের চাম্বি খালে রাবার ড্যাম স্থাপন করা হলে বোরো ও আমন মৌসুমে কমপক্ষে তিন হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বাড়বে এবং প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল বেশি উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
চরম্বা রাবার ড্যাম এলাকার বাসিন্দারা জানান, নদীর তলদেশ থেকে এলএলপির (লোয়ার লিফট পাম্প) সাহায্যে পানি ওঠানোর ফলে আগে একরপ্রতি সেচ খরচ হতো পাঁচ হাজার টাকা। রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে এখন সেই খরচ দুই হাজার টাকায় নেমে এসেছে। ফলে চরম্বায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৩৯২ হেক্টর থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার হেক্টরে।
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টংকাবতী খালে রাবার ড্যাম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর এলাকায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। পাশাপাশি একরপ্রতি সেচ খরচও কমে গেছে।
উপজেলার পদুয়ার হাঙ্গর খাল ও চুনতির চাম্বি খালে রাবার ড্যাম স্থাপন করা হলে লোহাগাড়ায় চাল উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লোহাগাড়ায় বছরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চালের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উপজেলায় উৎপাদন হয় ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল। আরও দুটি রাবার ড্যাম স্থাপন করা হলে ধানসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন বেড়ে যাবে। এলাকার চালের চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্রও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আউশ মৌসুমে অতিরিক্ত আরও দুই হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বোরো মৌসুমে পানির স্বল্পতার কারণে চাষ কম হয়। আরও রাবার ড্যাম স্থাপন করা হলে খাদ্য ঘাটতি কমার পাশাপাশি এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন বাড়বে।’
চরম্বা রাবার ড্যাম প্রকল্পের সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, রাবার ড্যামটি স্থাপন করার আগে এলাকার অনেক মানুষ খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটাত। বর্তমানে সেচসুবিধা পাওয়ায় এলাকাবাসী সারা বছর চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। পাশাপাশি রাবার ড্যাম প্রকল্পের সংরক্ষিত পানিতে মাছ চাষ করে অনেকে লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান বলেন, প্রস্তাবিত এলাকাগুলোতে দ্রুত রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এলজিইডি কার্যালয় থেকে রাবার ড্যাম স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফিজনূর রহমান বলেন, লোহাগাড়ায় আরও দুটি রাবার ড্যাম স্থাপিত হলে খাদ্যঘাটতি বহুলাংশে কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে।