
কাঠফাটা রোদে গরমের হাঁসফাঁস থেকে বাঁচতে শান্তি জোগায় এসির শীতল পরশ। একসময় যে এসি ছিল বিলাসপণ্যের তালিকায়, এখন তা হয়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয়। ঘরে কিংবা অফিসে আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে লাগানো হচ্ছে এসি। কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ ব্যস্ততায়ও হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে না এসির কল্যাণে। ঘরে ফিরেও সেই শীতল পরশ। পরিবারের সবার সঙ্গে গুণগত সময় কাটানোতে গরমের অস্থিরতার বদলে এসি দিচ্ছে আরামের প্রলেপ।
শীতল পরিবেশে স্বস্তিতে কাজ ও আরামদায়ক ঘুমের সঙ্গে এসি ব্যবহারে আছে আরও উপকারিতা। আপনার বাড়ির এসিটি অ্যাজমা অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এসি শুধু বাড়ির আর্দ্রতা কমায় না, এটি অ্যালার্জেনও কমায়। অ্যালার্জেন হলো ধুলোবালু, ফুলের পরাগরেণু বা বায়ুবাহিত অন্য জিনিসপত্র, যেগুলো মূলত হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগের কারণ ঘটায়।
এসির শীতল পরশ কর্মক্ষমতা উন্নত করে। অস্থির গরমে যখন কাজ করা ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে, এসি দেয় স্বস্তি, তৈরি করে নির্বিঘ্নে কাজ করার পরিবেশ। যন্ত্রটি পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। নিম্ন তাপমাত্রা মানে কম ঘাম। ঘামের সঙ্গে আমরা শরীরের পানি হারিয়ে ফেলি, যা থেকে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে। এসিতে এ ঝুঁকি এড়ানো যায়।
ব্যায়াম করার জন্য শীতল জায়গার জোগান দেয় এসি। এর কল্যাণে শরীরচর্চাও হয় আরামের। এসি পোকামাকড় ও পরজীবীর পরিমাণ কমায়, যার ফলে জীবন হয় স্বস্তি ও আনন্দের। এর ফিল্টারগুলো খোলা জানালার তুলনায় পোকামাকড় বাইরে রাখতে বেশি কার্যকর। পোষা কুকুর বা বিড়ালের গায়ে যেসব মাছি বা ফ্লি হয়ে থাকে, সেগুলো নিরোধেও এসি কাজে দেয়। এসি ব্যবহারে বিরতিহীন আরাম পেতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে—
ঘরের তাপমাত্রা যত বেশি, ঘর ঠান্ডা করতে এসি তত বেশি সময় নেবে। এ ক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে এসি চালাতে হবে। তাতে বিলও বাড়বে। ঘরে মোটা পর্দা লাগালে বাইরের গরম হাওয়া ও আলো কম আসবে। ফলে ঘরও তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০ মিনিট ধরে ঘরের জানালা-দরজা খুলে পাখা চালিয়ে রাখতে। পরে যখন দরজা-জানালা বন্ধ করে আবার এসি চালানো হবে, তখন ঘরটি ঠান্ডা করতে এসি মাত্র আধা ঘণ্টা বা তারও কম সময় নেবে।
রুম ঠান্ডা রাখার জন্য সারা রাত এসি চালিয়ে রাখার দরকার নেই। রাতে এসি চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ঘর ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই টাইমার দিয়ে রাখলে ভালো। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার টাইমার লাগিয়ে রাখলে নির্দিষ্ট সময়ের পর তা নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
এসি অন করে তার তাপমাত্রা অন্তত ২০ মিনিটের জন্য ১৬ ডিগ্রিতে ‘কুইক কুল’ মোডে রাখুন এবং তারপর সেটিকে ২৪ ডিগ্রিতে সেট করুন। এমনটা করলেও ইলেকট্রিক বিল কম আসবে।
ব্যুরো অব এনার্জি এফিশিয়েন্সির একটি গবেষণা অনুযায়ী, এসির তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রিতে রাখা সবচেয়ে ভালো। কারণ, এ তাপমাত্রা মানবশরীরের জন্য স্বস্তিদায়ক। গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, এসির তাপমাত্রা যত বাড়ানো হয়, প্রতি ডিগ্রিতে ৬ শতাংশ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। তাই এসি ১৮ ডিগ্রির পরিবর্তে ২৪ ডিগ্রিতে চালিয়ে রাখলে ইলেকট্রিক বিল অনেকটাই সাশ্রয় হয়।
এসিতে ঝামেলাহীন আরাম পেতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখতে পারেন। ঘরে টিভি, ফ্রিজ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকলে তা থেকে তাপ নির্গত হয়।
এর কারণে ঘর বেশি গরম হয়ে যায়। রাতে এসি চালানোর আগে এ ধরনের ডিভাইস বন্ধ রাখলে বিদ্যুতের খরচও কম হবে।