
বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এক নারীকে (৩০) রিমান্ডে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার পর এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে মামলাটি দায়ের হয় উজিরপুর থানায়। কিন্তু বিষয়টি গোপন থাকার পর আজ সোমবার রাতে প্রকাশ পায়। ওই নারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
রোববার রাত পৌনে ১২টায় উজিরপুর থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিন উদ্দিন।
মমিন উদ্দিন আজ রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলাম, ওসি জিয়াউল আহসান, উজিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারসহ অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন।
এদিকে বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘ওই নারীর বিবৃতি আমরা যেভাবে আদালতের মাধ্যমে পেয়েছি, সেভাবেই মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছি। বিবৃতিতে তিনি যেভাবে স্পষ্ট করেছেন, সেভাবেই নাম এসেছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টির তদন্ত চলছে।’
এর আগে আজ সকালে অভিযুক্ত উজিরপুরের ওসি জিয়াউল আহসান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলামকে জেলা পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়।
আজ প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান।
ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান বলেন, প্রশাসনিক কারণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, যাতে তাঁরা তদন্তে কোনো প্রভাব বিস্তার না করতে পারেন।
নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ তদন্তের জন্য গত শুক্রবার বরিশালের পুলিশ সুপারকে বলেছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের বিচারক মাহফুজুর রহমান।
আদালত সূত্র জানায়, গত ২৮ জুন ওই নারীকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে উজিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পরপরই এক নারী পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালান। পরে উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও তাঁকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয় এবং ২৯ জুন তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
আদালতে ওই নারী আসামি অভিযোগ করে বলেন, ৩০ জুন রিমান্ডে নেওয়ার পর তাঁকে মারধর না করা হলেও পরের দিন সকালে তাঁকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর ওপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয়। এরপর এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে নিয়ে তাঁকে আবার লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই তাঁকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে পেটান। তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখতে পান।
তবে এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে গত ২৫ জুন রাতে উজিরপুরের জামবাড়ি এলাকায় বাসুদেব চক্রবর্তীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন জামবাড়ি গ্রামের একটি ডোবা থেকে বাসুদেবের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাসুদেবের ভাই ডোবাসংলগ্ন বাড়ির এক নারীকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ২৮ জুন ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জুন তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়।