করোনা টিকার নিবন্ধন বাড়াতে জেলায় প্রচারণা শুরু

সরকার করোনার টিকার নিবন্ধন বাড়াতে চায়। কিন্তু সারা দেশে এ ব্যাপারে প্রচার কম। মানুষ না জানলে নিবন্ধন বাড়বে না।

করোনা টিকা
ছবি: রয়টার্স

করোনা টিকার নিবন্ধনের জন্য সরকারের প্রচার-প্রচারণা কম দেখা যাচ্ছে। ২২টি জেলায় সীমিত আকারে প্রচারণা শুরু হয়েছে। টিকার জন্য নিবন্ধনও কম হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা গতকাল দেশের সব জেলার করোনার টিকাবিষয়ক কমিটির প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাতে জানা গেছে, ৪২টি জেলায় করোনা টিকার নিবন্ধনের জন্য কোনো প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়নি।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ গত সোমবার প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেছিলেন, তাঁরা জেলার প্রতিটি মসজিদের মাইকে টিকার জন্য নিবন্ধন করার ঘোষণা দেবেন। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় মাইকে ঘোষণা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। গতকাল গোপালগঞ্জ শহরে মাইকে এ বিষয়ে প্রচার শোনা গেছে। সিভিল সার্জন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আগামী শুক্র ও শনিবার জেলার পাঁচটি উপজেলায় টিকার নিবন্ধনের জন্য মাইকিং করা হবে।

এর আগে ৩১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব জেলায় চিঠি পাঠিয়ে টিকার নিবন্ধন সহজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক জেলার করোনাবিষয়ক কমিটি সভা করেছে এবং প্রচার-প্রচারণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সব দপ্তরে নিবন্ধনের ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নিতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে, টিভিতে স্ক্রল যাচ্ছে।

গতকাল পর্যন্ত দেশের ৬১টি উপজেলায় টিকা পৌঁছানোর খবর পাওয়া গেছে। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে গতকাল পর্যন্ত টিকা পৌঁছায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, গাজীপুরে জেলার জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য ১ লাখ ৫৬ হাজার টিকা রাখা হয়েছে।

৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে করোনার টিকা কর্মসূচি শুরু হবে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া একাধারে ১২ দিন টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এই সময়ে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ঢাকা জেলার জন্য সবচেয়ে বেশি টিকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলার মানুষের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার টিকা। এরপর বেশি বরাদ্দ চট্টগ্রাম জেলার জন্য। এই জেলায় ৪ লাখ ৫৬ হাজার টিকা পাঠানো হয়েছে। বেশি টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে আছে ময়মনসিংহ জেলা। এই জেলায় ৩ লাখ ২৪ হাজার টিকা গেছে। সবচেয়ে কম টিকা গেছে পাঁচটি জেলায়। এর মধ্যে আছে তিন পার্বত্য জেলা: রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। আর আছে মেহেরপুর ও ঝালকাঠি। এই পাঁচটি জেলায় টিকা গেছে ১২ হাজার ডোজ করে।

টিকা পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি জেলায় জেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে টিকাদান কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কীভাবে তা সামাল দিতে হবে, সে বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করা আছে। তবে ৮টি জেলায় গতকাল পর্যন্ত কোনো প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি। জেলাগুলো হচ্ছে: গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, মেহেরপুর, যশোর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও সিরাজগঞ্জ। তবে দু-এক দিনের মধ্যে এসব জেলায় প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সব দপ্তরে নিবন্ধনের ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নিতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে, টিভিতে স্ক্রল যাচ্ছে।
নাসিমা সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক

৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে করোনার টিকা কর্মসূচি শুরু হবে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া একাধারে ১২ দিন টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এই সময়ে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে অধিদপ্তর।

সুষ্ঠুভাবে টিকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল ৫৬ জেলা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে যে টিকা দেওয়ার দিন টিকাকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য জেলাগুলো এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।