ঈদের আগে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবাধে গরু আসা বন্ধ হওয়ার খবরে জেলায় খামারির সংখ্যার সঙ্গে গরু পালনের সংখ্যাও বেড়েছে। এখন শুধু ভালো দামের অপেক্ষায় আছেন খামারিরা।
খামারিদের ভাষ্যমতে, প্রতিবছর কোরবানির আগে ভারত ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে প্রচুর গরু আসায় দেশের গরু বিক্রি কম হয়। এতে গরু পালনকারীরা লোকসানের মুখে পড়েন। এ ছাড়া দেশের গরু মোটাতাজাকরণে নিষিদ্ধ ওষুধ সেবন করার অভিযোগ থাকায় গরু কম বিক্রি হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সূত্রমতে, জেলার ছয়টি উপজেলায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছোট-বড় প্রায় ১২ হাজার গরু মোটাতাজাকরণের খামার ছিল। এতে গরু ছিল প্রায় ৯০ হাজার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খামারে গরুর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারে। কিন্তু এ বছর প্রায় ১৬ হাজার খামারে ৭৫ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খামার রয়েছে সদর উপজেলায়। এই উপজেলায় কুমারগাড়া, জগন্নাথপুর, আইলচারা, খাজানগর, উজানগ্রাম, হরিনায়াণপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শতাধিক খামারে ২৫ হাজার গরু রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আসাদুল হক বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নে এ অঞ্চলে সব সময় গরু পালন করা হয়।
কুমারগাড়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁর খামারে ৬০টি বড় বড় গরু রয়েছে। তিনি আট বছর ধরে এ কাজ করছেন। কোরবানির এক সপ্তাহ আগে তিনি গরুগুলো ঢাকার হাটে নেবেন। তিনি আরও বলেন, গত দুই বছরে ভারত থেকে গরু আসা ও দাম না থাকায় ৩৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল। বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করে এলাকার অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভারত থেকে গরু না আশায় এবার দেশে গরুর দাম বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
ওষুধ সেবন করিয়ে গরু মোটাজাতকরণের ব্যাপারে আসাদুল হক বলেন, চার মাস ধরে একটি গরুকে ঠিকমতো পালন করলে ৮-১০ মণ মাংস পাওয়া সম্ভব। সাধারণত কৃমিমুক্ত, ক্ষুদামন্দা দূর করতে ও মুখে রুচি আনতে গরুকে ওষুধ খাওয়ানো হয়।
কুমারখালী উপজেলার জোতপাড়া গ্রামের মোল্লা বলেন, তিনি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে মোটাতাজা করেছেন ২৬টি গরু। ইতিমধ্যে একটি গরু খামার থেকেই বিক্রি করেছেন। বাকি গরু নিয়ে যাবেন চট্টগ্রামের হাটে।
গরু মোটাতাজাকরণে যাতে কোনো ব্যক্তি অসাধু কাজ না করতে পারে সে জন্য তিন দিন ধরে সব উপজেলায় প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি চলছে। জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) আনার কলি মাহবুব বলেন, খামারিদের কথা চিন্তা করে জেলায় কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। গ্রামের খামারি ও ওষুধ ফার্মেসিগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গ্রাম্য পশুচিকিৎসকদের সচেতন করতে তাঁদের সঙ্গে সভা করা হচ্ছে। এলাকায় মাইকে সচেতনতামূলক কথা প্রচার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পশু মোটাতাজাকরণে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োগ ও খাওয়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।