Thank you for trying Sticky AMP!!

'কোটা সংস্কার ছাত্রদের বিষয় না, এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়'

গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা, ২ মে। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছাত্ররা কোটাব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন আনার দরকার কী?

আজ বুধবার বিকেল চারটায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।

কোটা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্ররা দাবি করেছে, সেটি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন হা-হুতাশের কী আছে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা সংস্কার ছাত্রদের বিষয় না। এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়।’


কোটা সংস্কার প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ছেলেপেলেরা লেখাপড়া করছে বা হোস্টেলে থাকছে, তারা কি বিভিন্ন জেলা থেকে আসেনি? তারা মেধাবী, আমি জানি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলনে যারা ছিল, তাদের ছবিটবি সংরক্ষণ করা আছে। তখন দেখা যাবে। ওই জেলার কারা কারা আন্দোলনে ছিল, সেটিও আমরা দেখব। তারপর যদি এসে কান্নাকাটি করে, আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর ছাত্ররা কোটা চায় না। কোটা চায় না, আমি দাবি মেনে নিয়েছি। এখানে ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই। ঠিক আছে, ছেলেমেয়েরা দাবি করেছে, আমি মেনে নিয়েছি। সেটি নিয়ে এখন আলোচনার কী আছে বা প্রশ্ন আনার দরকার কী?’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান এবং অসম্মানজনক কথা বলা, এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না।’

কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অনেকে এর ভেতর ঢুকে পড়ে। এ বিষয়ে কাউকে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। স্বাধীনতার পরপর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের জন্য জাতির পিতা প্রতিটি ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এটা খুবই বাস্তবসম্মত। অথচ কথা নেই, বার্তা নেই এই আন্দোলন শুরু হলো। এই আন্দোলন শুধু আন্দোলন না, রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়ে...সেখানে তিনটি হাসপাতাল। রোগী যেতে পারছে না। এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে যারা পড়ালেখা করে, তারা নামকাওয়াস্তে পয়সা দিয়ে পড়ে। তাদের আমরা সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় পড়াই। তারা যে হলে থাকে, যে টাকা দিয়ে তারা ভাড়া দেয়, খাবার পায়, ক্লাস করে—সেই টাকা দিয়ে সম্ভব? যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত, তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে খরচ চালানো হয়।’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এটা আওয়ামী লীগই শুরু করেছে। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সুবিধা, অসুবিধা দুই-ই আছে। ভোটে যদি না হয়, তাহলে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। ছাত্রদের মধ্য থেকে ভালো নেতৃত্ব খুঁজে বের করাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। কোন পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে, সেটি বিষয় নয়।’

তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলবে
তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নিশ্চয় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দেশে নিয়ে আসা হবে।’
তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে যে দলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়, রাজনীতিতে এর চেয়ে বেশি দেউলিয়াত্ব আছে? বিএনপিতে এর চেয়ে যোগ্য কেউ নেই?’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা খুনিদের পুরস্কৃত করে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠিত করে, তারা কীভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে। এসব কারণে একজন সাজাপ্রাপ্ত এবং পলাতক আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’

নির্বাচন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে আসা না-আসা একটি দলের নিজেদের সিদ্ধান্তের বিষয়। এত উন্নয়নের পরও জনগণ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে না?’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমি জেলে দিইনি। আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দিয়েছেন।’ এখন কেউ দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে না বলে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আনবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। এই সফরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা আমাদের দেশে এসেছেন, তাঁদের মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক। তাঁরাও চান মিয়ানমার থেকে যে ১১ লাখ মানুষ এসেছে, তারা সেখানে ফিরে যাক।’ বাংলাদেশ যে এতগুলো মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে, তারা তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারকে চাপ দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সড়কে শৃঙ্খলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার এই কথাগুলো অনেকে পছন্দ করবেন না, কিন্তু যা বাস্তব, তা-ই বলছি। রাস্তায় চলার নিয়ম আছে, সেটা আমরা কতটা মানি? একটা গাড়ি দ্রুতগতিতে আসছে, আমরা হাত একটা তুলে রাস্তায় নেমে গেলাম...যারা পথচারী, তাদেরও কিছু রুলস জানা দরকার, মানা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন, কেন আপনি হাত বাইর করে যাবেন? আপনারা (সাংবাদিক) যার হাত গেল, তার জন্য কান্নাকাটি করছেন; কিন্তু সে যে নিয়ম মানছে না—সে কথা তো বলছেন না।’

হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল এবং সিটবেল্ট না বেঁধে গাড়িতে চড়াও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পারাপারে পথচারীদের আইন মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরিতে বেসরকারি গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশনগুলোকে কিছু সময় সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের আহ্বান জানান তিনি।