মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় একটি মুরগির (পোলট্রি) খামারের বর্জ্যের দুর্গন্ধে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। দুর্গন্ধে টিকতে না পারায় অনেক পরিবারের শিশু ও মহিলাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যাঁরা বাধ্য হয়ে থাকছেন তাঁরা নাকে কাপড় বা রুমাল চেপে চলাচল করছেন।
মুরগির ওই খামারটি সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের। এটি মৌলভীবাজার-শমশেরনগর সড়কের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট এলাকার রহিমপুর শাখা। দুর্গন্ধের কারণে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীদেরও সমস্যা হয়।
এখানে বাণিজ্যিকভাবে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বন্ধের দাবিতে ক্ষুদ্র পোলট্রি খামার বাঁচাও সিলেট বিভাগীয় কমিটি এবং মৌলভীবাজার পোলট্রি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে গতকাল সোমবার মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের মুরগির খামার থেকে এক মাস ধরে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এতে আশপাশের প্রতাপী, জগনশালা, কান্দিগাঁও, জগন্নাথপুর, বড়চেগ, ছয়কুট, লক্ষ্মীপুর ও বিষ্ণুপর গ্রামের মানুষের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারখানায় ব্রয়লার মুরগির (মাংসের মুরগি) উৎপাদন শুরুর পর থেকেই এ দুর্গন্ধের সৃষ্টি।
প্রতাপী গ্রামের নীহারেন্দ্র দেব গত রোববার বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। দুর্গন্ধ সহ্য করার না।’ চৈত্রঘাটের মহেশ ভৌমিক বলেন, ‘বাতাস যেদিকে প্রবাহিত হয়। গন্ধ সেদিকেই বেশি হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাদের।’
গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, খামার এলাকায় লোকজন নাকে হাত, কাপড় বা রুমাল চেপে রাস্তা অতিক্রম করছেন। দোকানে ব্যবসায়ীরা নাকে কাপড় বেঁধে আছেন। বাড়ির ভেতর ও বাইরে মহিলারা নাকে আঁচল চেপে কাজকর্ম করছেন। সড়কের চৈত্রঘাট এলাকা অতিক্রম করার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ও চালক এক হাত দিয়ে নাক চেপে আছেন।
পরিবেশদূষণ বন্ধের দাবিতে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে গত রোববার রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ইউপির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল বলেন, ‘স্মারকলিপি পাইনি। তবে কিছুটা দুর্গন্ধ আছে। ইন্ডাস্ট্রি হলে তো কিছু গন্ধ থাকেই। তাদের (সিপি) সঙ্গে কথা হয়েছে।’
সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড রহিমপুর শাখার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মফিদুল হক বলেন, ‘দুর্গন্ধ যদি হয় এলাকার লোকজন অথোরিটিকে বলুক। আমরা তো ভেতরে গন্ধ পাচ্ছি না। তারা বাইরে কী করে পাচ্ছে।’
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ফারুক আহমদ গত রোববার বলেন, ‘বিষয়টি এখনো জানি না। লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিব।’
দুর্গন্ধে টিকতে না পেরে অনেকে পরিবারের মহিলা ও শিশুকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। চৈত্রঘাট গ্রামের মো. সুহেল আহমদ বলেন, ‘বউ-বাইচ্চা তিন দিন ধরি কমলগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিছি। এভাবে চললে তো পারব না। কোম্পানির সঙ্গে তো আমাদের কোনো হিংসা-বিদ্বেষ নেই। কোম্পানি হওয়ায় আমরা খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো বাঁচাই মুশকিল।’ একই গ্রামের মিহির লাল দেব বলেন, ‘গত শনিবার বাচ্চাদের শায়েস্তাগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি রেখে আসছি। এক সপ্তাহ ধরে বাচ্চাদের ডায়রিয়া। নাভিতে কামড়ানি। শ্বাস নিতে কষ্ট।’